Thursday, November 17, 2011

কুর কুরাইন্যা আঁসি (চট্টগ্রামী ভাষার গল্প)

কুর কুরাইন্যা আঁসি
(চট্টগ্রামী ভাষার গল্প)
কাফি কামাল

অ’লাঘর এদ্দে পন্নার ঘরর মাঝ’দি উদা একখান বাঁশর বেরা। তরজা বেরার এ্যারদি এত্তুন অড়ে দেহা যায়। এ ঘরর হতাও এস্পসট্ ওই ঘরত ওনা যায়। মইনদ্দিন পইত্যদিন আজুইন্ন্যা সুখতারারে পেরাইভেট পরাইত যাই অ’লা ঘরত তেইর মা-চাচি অ’লর হতা ওনে। হানত কুরকুরাইন্না আঁসির আবাজ আইয়ে। পইলা পইলা ইঁন হানত ন গলাইত। খেয়াল ফিরাইবালাই সুখতারারে জোরে জোরে পইত্য হঁই ডাক দিত। কিন্তু আস্তে আস্তে হানর পদ্দা পাতল অই যায়। ইতারার হতা বাত্তারা খেয়াল গরে। থাই থাই- পন্না পরাইতে পরাইতে পন্নার টেবিলত ছোড়-হাড়’ সুখতারার মুখর ইক্কা ঠা’রি চায়। কি সুন্দর চাঁদর ডইলা মুখ। অলইদড্ডইল গ’র রং। মইনদ্দিনর চওগর পদ্দাত এনেমত্তর সুখতারার জাগাত কুনছুমা হাতুর মুক্খান ভাঁই ওডে। কেলা গাছর নান লম্বা আর অইল মাছর নান আগা-গোরা এক পোয়ানইন্যা শরীল। দুই পোয়ার মা কুনছুমার চেয়ারাত অক্কল সমত একডইল্যা মিক্কা কি এক্কান যেন ভায়। লায়দে কিছু একখান হঁই’ত চায়। কি হইত চায় আর হারে হইত চায় মইনদ্দিন বুঝিত নপারে।
গাছবারিয়া হলেজর ছাত্ত’র মইনদ্দিনঅ এক্কেনা-আদগেনা পেয়ার-মোয়াব্বতর হোজ-হবর রাহে। হলেজর মাইয়া অক্কল দেইলে বুকর ভিতর মোচর মারি ওডে। দুই-তিনজন একফোয়ারে থাইলে হতায় বাত্তারায় শতাইন্যাইও গরে। তই ফোয়াইরগ্যা অক্কলে পেম-পিরিতি গইল্লেও মইনদ্দিন এহনঅ এ্যাই সুজুগ নপায়। এ’দিন্যা হলেজর কেলাচমিট দোআজারির জমিলারে ওরনা ধরি টান মাইল্যে ইঁতি মিডা আঁসি দি’ হঁয়- লাইলে আঁ গরি লওনা। ওরনা টান মারি কি অইব? কিন্তু মইনদ্দিন জোয়াব দিবালাই যহন-তহন হন’ হতা তোআই নপায়। ত’ হঁয়- দৌর মারি বিয়াত য’র কিল্লায়। আইজো ত আঁর অ’রিয়ে হ’র ন’হায়।
তই পইত্যদিন আজুইন্ন্যা সুখতারারে পেরাইভেট পরাই’ত আই টেবিলত বইলেই বুকর ভিতর কি যেন লরে-চরে। বারবার সুখতারার ইক্কা চউ¹েইলঅ মন্নান বেরার অইকুলে পুচুর-পাচুর হতা এদ্দে কুর কুরাইন্না আসির ইক্কা পরি থায়। হারন, সুখতারার বুকত এ্যাইজো টিলা-টংকর ন’ জালায়। চওগর হতা-বাত্তারাঅ বুজিত নপারে। এতলাই সুখতারার মুখর ইক্কা চাইলেই কুনছুমা হাতুর চে’য়ারাআন ভাঁই ওডে। কুনছুমা হাতুঅ সুখতারারে পরাইবার সমত নানান উছিলায় মইনদ্দিন’ত্তুন ইয়ান-ওইয়ান পোছার গরে। আঁসি আঁসি হতা হয়। হলেজর মাইয়া পোয়া অলর হতা পোছার গরে। দেও’রন্নান ডক-মশকারিও গরে। মইনদ্দিনঅ ভাবি ডাই থাই থাই জোয়াব দে।
এদ্দিন সুখতারারে পরাইত যেই দেহে ইবা খালারত বেরাইত গেইয়ে। মইনদ্দিন কিছু হইবার আগদি কুনছুমা হাতু হঁয়- সুখতারা নাই ত কি অইয়ে, চা হাই য’ন। কুনছুমা হাতু অ’লা ঘরত যাই তরাতরি মইনদ্দিনর লায় চা বানাই আনে। নিজল্লায় অ এক্কাপ বানায়। বেলা বিস্কুট দি চা হেইতে হেইতে পোছার গরে- মইনু লাইন-তাইন ক্যান চলের? মইনু আঁসিয়েরে হয়- না না আই এ্যাই লাইনত নাই। কি’হ ওয়া এই বয়সর পোয়াঅক্কল লাইনত নপরি থাইত পারে নেকি? মইনু কুনছুর হতা উনি চুম্মারি থায়। কিন্তু মিডা মিডা আঁসে।
আরেদ্দিন আজুইন্ন্যা সুখতারারে পরাইত যাই মইনদ্দিনর মাথা ক’রায়। মাস’টরর চেয়ারা দেই সুখতারা পোছার গরে- ছার অ’নত্তুন ক্যান লা’দ্দে? মইনদ্দিন ছাত্তিরির পছ’ন ওনি হঁয়- আত্তুন মাথা ক’রাদ্দে বেশি। অ’লা ঘরত থাই এহতা ওনি কুনছুমা হাতু এক্কেনা বাদে বর্মাইয়া ভাম লই আনে। নিজর আতে মইনদ্দিনর হোয়ালত ভাম ডলি দিতে দিতে হঁয়- সুখতারারে আজিয়া পরা নপরিব। হানিকন লেডিয়েরে বিছছেরাম ল’ন। মায় এ হতা হুননর ফোয়ারে ফোয়ারে সুখতারা বইপত্ত’র গুছাই পন্নাতুন উড়ি যাগই। বরমাইয়া ভামর ঝাঁছ, যোয়ান ভাবির আতর ছোয়া পাইয়েরে হানিনর মইদ্দে মইনদ্দিনর মাথা পাতল অই যায়। এক্কেনা বাদে টেবিলত ভাত ভারি আনি কুনছুমায় হঁয়- আজিয়া আর ঘরত য’নর দরহার কি? ভাত হাইয়েরে লেড়ি থা’হ। তোয়ার বদ্দাও আজিয়া শ’রত্তুন ন আইব। মইনদ্দিন ছাত্তিরির মা’র পস্তাব উনি এক্কেনা দোনা-মোনা গরে। মইনদ্দিনর বারি আধামেইল দুরে পচিম পারাত। ঘরত যাইবার য়েন হ’ন দরহারও নেই। বদ্দার সংসারত বুরা মা বাদে কেয়াই এ্যান হোজ-হবরও লইবার নেই। এ’তল্লাই মইনদ্দিন চুপ মারি থাহে। হতা হইতে-হইতে কুনছুমা হাতু এক্কাপ চা ইজাই আনে।
হ’তদিন ধরি মইনদ্দিন সুখতারারে পরাইতে-পরাইতে রাইত গরি ফেলায়। আছলে পন্নাত্তুন ভারা আইজ-হাইল গপর ইক্কা বেশি খেয়াল মইনদ্দিনর। মা’র আশকারা পেই সুখতারাঅ দো’রইচ্ছা হরই কুরান্নান হর হরানী শুরু গইরগ্যে। মইনদ্দিনর খেয়াল কিন্তু কুনছুমা হাতুর ইক্কা। এ’তল্লাই সুখতারার লয় থাই-থাই মিড়া হতা হইলও ছোয়ার-থাপ্পর অ দে। তই হন’দিন ছোয়ার-থাপ্পর দিলে কিন্তু হাইনতে-হাইনতে সুখতারা চওগ পুলাই ফেলায়। গাল পুলাই বই তায়। হ’ন হতার জোয়াব ন দে। তহন মইনদ্দিন তেইর গাল টানি- চুল টানিয়েরে আবার হতা হোয়ায়। গোস্সা হমিলে সুখতারাঅ ভালা গরি পরালেহা গরে। ব’র বরো মেইয়া বলি সুখতারার অউশ-আল্লাদও এক্কেনা বেশি। তই মা’ল্লয় ছা’রে ডক-মশকারির হতা হইলে ইয়ত্তুন শরি যায়। নইলে ডর-ডর গরি পন্না পরি খেয়াল অন্যমিক্কা দি রাহে। থাই-থাই রাইত অইলে সুখতারা ওড়ানর অইকুলে মাইট্টা বরঘরত যেই ঘুম যাগই। তেইর ছোডবইন কেলাচ টু’র সন্ধ্যাবতীরে ত বই লই ব’ন্নান অ হসট্। আজুইন্যা অইতে-নইতে টেবিলত মাথাদি ঘুম যাগই। তহন মইনদ্দিনর লয় কুনছুমার হতাও শেষ অই ত নছায়। মইনদ্দিনঅ কুনছুমার হতার ভোল’ত্তুন ওড়িত নপারে।
ছোড়’-হাড়’ সরগারি চইরগ্যা আদ্দু ছালাম মেইয়া পোয়ার পরা-লেহার উন্নতি দেই মনে মনে খুশি অয়। অফিস’র হাজে তাত্তুন এগজা শ’রত যা পরে। রাতিয়া ঘরত আই মইনদ্দিন’রে পেইলে ইয়ান-ওইয়ান গপ মারে। কুনছুমাঅ ইতারার গপত বই আরার-পারার নানান হতা হঁয়। রাইত বারিত গেলে ফোয়ারে বোয়াই ভাত হাবায়। তই ফিত্তে দেরি অইলে শ’রত থাই যাগই। হ’দিন আগে শ’রত্তুন আইবার স’ত নোয়া ও¹্যা আতগরি কিনি আইন্যে আদ্দু ছালাম। মইনদ্দিনর আতত দি’ আদ্দু ছালাম আঁসিয়েরে হঁয়- মেইয়াউয়া এক্কেনা ভালা গরি পরাইঅ। বাশশিক পরিকখাত ভাল গইল্যে আই তোয়ারে উপযুত্ত সম্মান গইরগম। শরমিন্দা অই মইনদ্দিন তহন হঁয়- না না, ঠিক আচে- ঠিক আচে।
যেই বছর সুখতারা কেলাচ সেভেনত ওড়ে এ্যাই বছর অঠাত ঘরি কুনছুমার হাতুর পেড়ত টিউমার অয়। তই ইবারে লই চাইর’মিক্কা ডাক্তর-বৈদ্য লই দৌরা-দৌরি গরে মইনদ্দিন। টেয়া-পইসা লই হন’ চিন্তা নেই। যিয়ানদি যেদুন লাগে আদ্দু ছালাম আতখুলি হরচ গরে। তই দৌরা-দৌরির লাই মইনদ্দিন’রে পাইয়েরে বউত আচান পায় আদ্দু ছালাম। শেষ পইয্যন্ত ডাক্তর অ’লে শ’রত লইযাই অপার’শন গইত্য পরামস্ব দে। ইয়ার পর অপার’শন গইত্য চিটাং মেডিকেলত যাই’বস্বত মইনদ্দিন’রে কুনছুমা হাতুর ফোয়ারে লই যায়। পেরাই এম্মাস আসপাতালত হাড়াই কুনছুমার চিকিগসাল্লায়। দিন-রাইত ডাক্তরর পিছ’দি দৌরি-দৌরি আর অসুদ পত্ত’র থোয়াই কিনি আনে। ঘন্টায় ঘন্টায় পোছার গরে- ক্যান লার অন’ত্তুন? কিচু হেইবান নে? রাইতট্টিয়া মোশার হ’র হেই আসপাতলত এম্মাস সেবা যত্তন গরি কুনছুমারে গম গরে। কুনছুমা আঁসি মুখে জোয়াব দে- আগত্তুন এক্কা গম লার। তুঁই আ’ল্লাই বউথ হসট্ গরইগ্য। আই তোয়ার এ্যাই গুণ হন’দিন ফুজিত নপাইরগ্যম।
কুনছুমা যহন আসপাতালত তহন ঘরত নেইজে সুখতারা তেইর ছোড়’বইন সন্ধ্যাবতীরে লই থাহে। মাঝ’দি এদ্দিন মা’রে চাই’ত বাপর ফোয়ারে শ’রত আইলে মইনদ্দিন ইবারে লই লালডি’র পার, নিউ মারকেডত্তুন বেরাই আনে। সিনেমা ছাইব না পোছার গইল্যে সুখতারা মাথা লারে। ছাত্তিরি রাজী অইলে মইনদ্দিন লালডি’র পারর খুরশিদ ম’ল সিনেমা অ’লর দুইয়ান টিগেড হাড়ে। অ’লর ভিতর ঢুকি আধারত ডরাইয়েরে সুখতারা অঠাত মইনদ্দিন’রে আজা গরি বেরাই ধরে। সিনেমার নায়ক-নায়িকা অ’লে নাচি-নাচি গীত গাইবার স’ত মইনদ্দিনঅ সুখতারার গালত আঁত বুলায়। সিনেমার নায়িকারে যেন নায়কে চুমা দে’ এ্যানডইলা সুখতারার গালত চুমা দিত মন চাইলও আশ-পাশ’র মাইনস্যর লাই নপারে। মইনদ্দিন’ত্তুন ডর লায়, কেয়াই যদি দেই ফেলে।
কুনছুমা হাতু গম অই আসপাতালত্তুন ঘরত আই’নর পর’ত্তুন ল’তি মইনদ্দিন’রে অন্য রহম চওগে চায় বেয়া¹ুনে। আদ্দু ছালামর হাছে মইনদ্দিনর নাম গরে। তে নিজর পোয়ার মত অইযাগই। সুখতারাঅ ছা’রর ফোয়ারে সিনেমা ছ’নর হারণে আইজ-হাইল এক্কেনা শরমিন্দা অই চলে। ইয়ারপর আদ্দু ছালাম শ’রত্তুন যেদিন নআইয়ে এ’দিন সুখতারা পরালেহা তরাতরি শেষ অইলও কুনছুমার লয় মইনদ্দিনঅর গপর শেষ নয়। লতার নান প্যাচ মারি মারি হতা বা’ত থাহে। আদ্দু ছালাম বেই বেরাদর অ’লত্তুন জুদা থাহার হারনে তারা এ’বারিত কি অইল-নইল এ’থ খেয়াল ন গরে। হন’ দরহার নথাইলে সুখতারা র ওডানত উদ্দা হেই নমারে। ইয়াত্তুন ভারা তারা নিজর ঘল্লই বেশি হবরদারি গরে। আর আধা বুরা আদ্দু ছালামর সুন্দরী বউর ইক্কা চওগ পইল্লে অ আরাইল্যা-পারাইল্যা অ’লে হজ্জিয়ার ডরে দুরে দুরে থাহে। দজ্জালর নান বউ ছারা পারাইল্যা অ’লে আদ্দু ছালাম’রে খুব ডরায়। হারন এ সিদ্দার পারাত আদ্দু ছালামর নান প্যাজর মানুষ আন্নাই। মাইনস্যরে হতায় হতায় হো’ট হাচারী দেহায়। কিন্তু কুনছুমা হাতুর হাচে আদ্দু ছালাম টাক্ক্যুার নার উজু। স’জে কুনছুমার হতার বাইরে কিছু হঁই’ত নচায়। হারন বিয়ার পরে দুনিয়ার বেয়াক মরদ পোয়া বউ’র আতর গুঁড়ি অই যাগই। কিল্লায় অয় ইয়ান আর খুলি হ’নর কি আচে। এতল্লাই মইনদ্দিনর লয় কুনছুমার হতা শেষ অই’ত নচায়। হত’দিন ধরি এ্যানডইলা রাইত বেশি অইলে মইনদ্দিনঅ সুখতারা র পন্নার ঘরত থাই যায়। কুনছুমা হাতু হঁয়- এ’থ রাতিয়া আধারে-বিধারে বারিত যাই কি অইব? ইয়াত্তু ভারা পন্নার ঘরত থাই য। মইনদ্দিনঅ মুছকি আঁসি কুনছুমার হতা ওনি থাই যাগই। এ্যাদিন্না সুখতারার ধল্ল্যুা চাচি মইনদ্দিনর ছাম্মদি কুনছুমা হাতুরে হঁয়- অপার’শন অর স’তি মাসটরে ত জামাইড্ডইলা তোয়ারে সেবা যত্তন গইল্ল। কুনছুমাঅ মুখর হতা হারি লই হঁয়- এ্যাই গুণ ফুঁজিত নপাইরগ্যম। জামাইঅ এ’দিইন গইত্য কিনা শনধ আচে। এ্যাই ঘটনার পর’ত্তুন ল’তি মইনদ্দিন’রে জামাই হঁই ডাহে কুনছুমা হাতু। তেইর জাল অক্কলে হতায় হতায় আঁসি আঁসি জামাই ডাহে। মইনু কিন্তু ইতারার হতা ওনি চুম্মারি থায়। তার খেয়াল ডাউক্কা অ’রির পতি। পইলা পইলা এক্কেনা-আদগেনা শরম পাইলেঅ আস্তে আস্তে ভাইলদি ওড়ে। অ’রি-ট’রি ডাই হতায় বাত্তারায় কুনছুমার লয় শ’তাইন্যায় গরে। তই সুখতারা কিন্তু আইজ-হাইল এ হতা ওড়িলে শরমে নিচর মিক্কা অই যাগই। ওরানাদি’ মুখ ঘুরি ফেলায়। ইন্দি এসব হতা-বাত্তারা এহান-ওইহান গরি পারাটিয়া অই যাগই। পারাইল্যা পোয়াছা অ’লে হতায় হতায় মইনদ্দিন’রে সুখতারার জামাই হঁই ডাহে।
গরমঅর দিনত রাতিয়া হালকুলর বালুচরত পারাইল্যা যোয়ান পোয়া-ছা অ’লে ম’ল খেলা, ছি’ খেলা হায়। ফোয়াইরগ্যা অ’লর ফোয়ারে মইনদ্দিনঅ খেলাধুলা গরি মাঝ রাইত্যা আর বারিত নজায়। হাছে সুখতারা র পন্নার ঘরত ঘুম যাগই। পরদ্দিন হলেজ’ত নইলে ফোয়াইরগ্যা অ’লর ফোয়ারে ইক্কা-উইক্কা যায়। বউথ স’ত এক সপ্তায়অ এব্বার বারিত নজায়। বারিত বুরা মা পইলা পইলা বাইরে মাইস্যর ঘরত রাইত নহাড়াইবার লাই মইনদ্দিন’রে গাইল-জুইল দিত। কিন্তু চওগত রঙ লাগ’নর হারনে মা’র হতারে এ্যান পাত্তা নদে। মা’রে ইয়ান-উইয়ান হইয়েরে বুঝদি ফেলায়। আইজ-হাইল মা’ও আর এ্যান হবর বাত্তারা নলয়। তার বদ্দাঅ হ’ন হাজে-হামে ছারা এ্যান ন তোয়াই। তই এ সুযোগত মইনদ্দিনঅ দিনর অক্কল স’ত সুখতারারত পরি থাই। ইন লই মাঝে মধ্যে চা’র দোয়ানত পারাইল্যা মাইনস্যে নানা রহম ছধনা গরে।
এ্যা’দ্দিন রাতিয়া ম’ল খেলা হেই মইনদ্দিন সুখতারারো আতিনা ঘরর চইত যেই ঘুম যায়। তই ঘুমর ঘোরত চাইট্টাইতে চাইট্টাইতে তার পরন’র লঙ্গি ওড়ি যায়। এ্যাদিন রাতিয়া আদ্দু ছালাম’ শ’রত্তুন ন’ ফিরে। সুখতারা নানারত গেইয়ে বেরাই’ত। ঘর’ত নেইজে গুরা পোয়া সন্ধ্যাবতী বা’দে আর কেয়াই নেই। তই রাতিয়া পেশাব গইত্য ওড়ি মইনদ্দিন’রে এ্যাই অবসথাত দেই আতিক্কা মিক্কা কুনছুমা হাতুর গা আত চমকি ওড়ে। নিজ’রে আর ধরি রাইন নপারে। হানিক্কন ইক্কা-উইক্যা চাই- দুনিয়াদারি ভুলি মইনদ্দিন’র বুকত ঝাপাই পরে। ঘুমত নেইজে মইনদ্দিনঅ ম’ল খেলার প্রতিপ এক পিলিয়ার’রে জাবুড়াই ধরি ফেলায়। কিছুন বা’দে ঘুমর ঘোর হাড়ি গেলই বুঝিত পারে ইবা ম’ল খেলার পিলিয়ার নয়- স্বয়ং কুনছুমা হাতু। ইন্দি কুনছুমা হাতুর শরীর’ত ভর গরি দুনিয়াদারি ঘুরি বল পরইগ্যা বিরিশর ডইলা ঘুম যায় মইনদ্দিন। বেইন্যা চুলভিজা কুনছুমার ডাক ওনি ঘুম ভাঙে তার। কিন্তু আ’রা রাইত’র ম’ল খেলা আর বলি খেলা হ’নর হারনে তে আর বিছান’ত্তুন ওড়িত ন পারে। শরীর’ত বল নপায়। শরমে কুনছুমা হাতুর মুখ ওজু চাইত নপারে।
হত’দিন ধরি কুনছুমার বুকর ভিতর কেন- যেন এড্ডইলা মিক্কা ধরপরায়। গা’আত মরি মরি আইয়ে। এ্যাদিন্যা এব্বার বমিঅ অইয়ে। ইয়ার পর’ত্তুন ল’তি মইনদ্দিন’রে কি এক্কান হতা হই’ব হই’ব গরি হোয়া নঅর। কিন্তু তার মনর ভিতর ধরপরানি শুরু অই গেইয়ে। মইনদ্দিন তহনো কিছু বুঝিত নপারে। হত’দিন বা’দে সুখতারার কেলাচ সেভেন’র বাশশিক পরিকখার রেজাল বাইর অয়। মইনদ্দিন সুখতারার ফোয়ারে ইসকুল’ত যাই রেজাল দেই শরমত পরি যাগই। সুখতারা অংক-ইংগেজিত পাস গরিত নপারে। তারপরো বিশেষ বিবেচনাত কেলাচ এইড’ত চান্স পাইয়ে। দুইরগ্যা বারিত ফিরি মইনদ্দিন হঁই বাল্লাই হনো হতা তোয়ায় নপায়। এ’ত গরি পাটিগনিত-বীজগনিত বুঝাইয়ে রও হ’ন লাভ ন অয়। মইনদ্দিন নিজ’ও ভালা গরি অংক-ইংগেজি নপারে। তারপর’ ফোয়াইরগ্যা অ’লত্তুন নোড- টোড আনি সুখতারারে পরাই’ত। কিন্তু মেইয়ায় রেজাল হারাপ গইল্যে ও এ’ই ব্যা’পারে কুনছুমার এ্যান আগ্ররহ নেই। মনত নেইজে অন্যচিন্তা ঘুরপাক হার।
এ্যাদিন রাতিয়া সুখতারা পন্না পইত্ত ন বইয়ে। তেইর ছোড়’বইন সন্ধ্যাবতীরে লই নানারত বেরাই’ত গেইয়ে। তই মইনদ্দিনর লয় ইয়ান-উইয়ান হতা হই’তে হই’তে এক পরযায়ে কুনছুমা হাতু পরসতাব দে। মইনদ্দিন তোয়ারে এক্কান হতা হই’ত চাই- রাইবা নি? মইনদ্দিনর লয়’ত এ্যান গরি হতা ন হঁয় কুনছুমা। এতল্লাই বলি তে খেয়াল গরি চায়। কুনছুমা এ্যাইবার উজু আছল হতা হই ফেলায়। তোয়ার লয় সুখতারারে বিয়া দিতাম চাইদ্দে, কেন হ? এক্কেনা বেচুত মিক্কা অইয়েরে মইনদ্দিনে হঁয়- ইআন ঠিক অইব নে? আ’রারগিন কি অই’ব? কুনছুমা হাতু চতুর মেইয়া ফোয়া। ফোয়ারে ফোয়ারে জোয়াব দে- ইঁন তুঁই ভুলি য গই। এ্যাই চিন্তা গরি লাভ নেই। আস্তে ধিরে বেয়া¹িন ঠিক অই যেই’ব।
মইনদ্দিনর মুখ’দি আর হ’ন হতা বাইর নয়। অঠাত গরি কুনছুমার মুখ’ত্তুন সুখতারারে বিয়া গরিবার পরচতাব ওনি মইনদ্দিন আগা-মাথা কিচু বুঝিত নপারে। চওগ’র ভিতর কুনছুমা হাতুরে লই হত কিছু ভাঁয়। বুকর ভিতর ধুক্কুর-পুক্কুর গরে। হ’ত ডইল্লা ডর লায়। কুনছুমা হাতু হঁয়- য এবার বারিত যেই তোয়ার মা’রে আর বদ্দারে রাজি গরঅগই। সুখর বাপর লয় বিয়েচেনা গরগি। বিয়ার ব্যা’পারে তোয়ার বর’ত যি’ন যি’ন চায় তোয়ারে বেয়া¹িন দিয়ম। বাজারত আর হাল’তো বেই শমচুর মারকেড রেডি অইলে তোয়ারে এক্কান দোয়ানও লই দিয়ম। দেওন- তো’নর হতা ওনি মইনদ্দিনঅ এক্কেনা লরি-চরি বইয়ে। দেশত চা-চ’রির যেই অবসথা, এ’দিইন দৌরা- দৌরি’ত্তুন বিয়া গরি দোয়ান পেইলে হতি কি? ত কুনছুত্তুন পোছার গরে- সুখতারা রাজী অইব’ত? তও’র... মেইয়া পোয়ারে আই যেন হ’ই এ্যান- কুনছু জোয়াব দে।
মেইয়ার বিয়ার ব্যা’পারে বউয়র হতা ওনি আদ্দু ছালাম পইলা এক্কেনা মনমারি ওট্টিল। বেহার পোয়ার লয় মেইয়ার বিয়া দি’ত ন চায় তে। মেইয়ারঅ এই’জ বয়স হম। বয়সর হতা ওনি কুনছু জামাইরে হঁয়, আইজ-হাইল দিনদুনিয়া ভালা নয়। ড’র মেইয়া ঘরথ রাহন্নান ঠিক নয়। ইন্দি আদ্দু ছালামর হানত হত ডইল্লা হতা-বাত্তারা আইয়ে। শেষপইয্যন্ত হয়েদ্দিন ধরি বউ’র গুচুর-গুচুরত্তুন থাইন নপারি রাজি অয়। টেয়া-পইসার, জোয়ার-যন্তর শুরু গরে। ইন্দি বিয়ার হতা শুরু অনর পরত্তুন ল’তি সুখতারা এদ্দে কুনছুমা দুনোয়া মইনদ্দিন’ত্তুন দুরে দুরে থায়। কুনছুমাঅ আইজ-হাইল বিয়ার হাজ-হাম বা এ্যাই ব্যা’পারে কি কি গরা পরিব ইঁন হঁই মইনদ্দিনর আতত কিছু টেয়া ধরাইদি ছাম্মতুন যাগই। সুখতারা’ত্তুন কি কি লাই’ব পোচার গইল্লে ইয়ান-উইয়ানর আঁরা দি ইক্কা-উইক্কা লুয়াই যায়। আর মইনদ্দিনর চওগত মা-ঝি দুনোয়ার চেয়ারা-চুরত ভাঁয়। নানান রহম হতা মনত পরে। মাঝে মাঝে চিন্তা গরে কুনছুমারে ক্যান গরি অ’রি ডাই’ব। এ্যাতদিন হতার হতা হই’ত। কিন্তু কুনছুমা হাতুর লয় এ্যাতকিছু গর’নর পর এহন ক্যান গরি অ’রি ডাহা যাই’ব। কুনছুমার মুখর ইক্কা চাই হতা ক্যানে হই’ব। আবার চিন্তা করে সুখতারা কি তারার হতা কিছু কিছু নজানে। তেই ক্যানে জামাই বলি ডাই’ব!
মইনদ্দিন বারিত যেই মা’রে হ’নর ফোয়ারে ফোয়ারে অইনর ডইল্লা জলি ওড়ে বুরি। বদ্দার বউ’অ মুখবারি মারি হঁয়- যার বিয়া তে গরি’ব আরার কি হতা। কিন্তু সুখতারা’র ঘরল্লয় তার এডইল্লা মিক্কা না’ইর টান পরি গেইয়ে। তই শেষ পইয্যন্ত মইদ্দিনর লয় সুখতারার বিয়ার হতা-বাত্তারা ঠিকঠাক অয়। বিয়ার হরচাল্লায় আদ্দু ছালাম মইনদ্দিন’রে চল্লিশ আজার টেয়া দে। মইনদ্দিনর বদ্দা নইমুদ্দিন পারাইল্লা মুরব্বি অ’লরে লই সমাজি এদ্দে বইরাত হাবাইবার ব্যা’পারে হতা-বাত্তারা ঠিক গরে। আদ্দু ছালাম হতা দে বিয়ার পর জামাইরে আঁড়ত এক্কান দোয়ান দেয়াই দিব। নইলে বেহার জামাই মেইয়ারে কি হাবাই’ব। তই পইল্লা উকিল-আদ্দর হতা ওড়িলে নইমুদ্দিন ওড়ি হঁয়- অতালই দুইবার হরচার দরহার কি? বে¹িন এক্কুদিনে গইল্লে ত অয়। চাঁদর তারিখ বুজি শুক্কুরবার বিয়ার দিন ঠিক গরে। রাতিয়া বিয়ার হতা-বাত্তারা ঠিক অনর পরে ভালা গরি ভাত পানি হাবায় দে আদ্দু ছালাম। নানান ডইল্লা তরহারি দেই নইমুদ্দিন খুশি অয়। তালই’র বারিত হানা-দানার এন্তেজাম দেহি মুরব্বি অ’লর হাছে তারার ইজ্জত বাইরগ্যে। পারার চদ্দার’রে হঁয়- দেইখ্যনি ওয়া আর তালই’র অন্তর ড’র। হত ডইল্লা তরহারি গরইগ্যে দেইখ্যনি! মনু মিজ্জি চদ্দারও চাপ দারিত আঁত বুলাইতে বুলাইতে জোয়াব দে- অয় ওবা, আদ্দু ছালামর অন্তরঘান ভর ড’র। কিন্তু আদ্দু ছালামর অন্তরঘান অঠাতগরি এত্তর ডর ক্যায়া অইল কেয়াই ধরিত নপারে।
ইন্দি বিয়ার নানান রহম আট-বাজার গর’নর পর আজুইন্না সাতহানিয়া’ত্তুন আইয়ে মইনদ্দিন। সুখতারারোত ব’র পোয়া ন থাহ’নর হারনে দুনো ঘররগিন তাত্তুন গরা পরের। চাই’র মিক্কা আত্তিয়-সজন’রে দ’ত দেয়া পরের তাত্তুন। তই অও’র ইন অওরত দি ঘররগিন লই ঘরর ইক্কা আ’ড়া দে মইনদ্দিন। হদ্দুর যাই আবার পিচ্ছে ফেরত আইয়ে। কুনছুমা হাতুল্লাই আনা অসুত্তিন দিয়েরে ফোয়ারে ফোয়ারে অওর’ত্তুন বাইরই যাগই। অ’রি এহন গর্বিতা। গতসপ্তাত কুনছুমা হাতুরে চুরি গরি ডাক্তরর হাচে লই গেইল। ইন মনত পইল্লে তার শরমে হলিজাঘান মোচরদ্দি ওডে। আইট্টে আইট্টে পানিত তিরাস লাগে। মনে মনে হঁয়- এ¹েলাস পানি হায় আইয়ুন আছিল্।
বিশিদবার বেইন্নাত্তুন ল’তি সাতহানিয়া’ত্তুন দইনকুল ইউনিয়নের সিদ্দার পারার টেন্ডল্যারত এদ্দে পচিমপারার কুইল্যা’র মাইকর ওজর’ল্লাই বলি মানুসে ঘরত থাইন নপারের। মাইকত নেইযে শেফালী ঘোষ এদ্দে কল্যানী ঘোষ’র গান বাজের দুনো বারিত। বিয়া বারির ওরুস্তুর শুরু অই গেইঅই। চাই’র মিক্কা’ত্তুন আত্তিয়-সজন অক্কল বিয়াবারিত আই পওছের। গুরা-গারা পোয়াছা অক্কলে অই চৈ গরের। বেইপুত বেইজি অ’লে হাগজ’র ফুলহাড়িয়েরে ঘর দুয়ার সাজায়। রাতিয়া মে’দি অনুষ্ঠানত পারাইল্লা যোয়ান মেইয়াপোয়া-মরতপোয়া অক্কল বে¹ুন ভাঁই পরই¹ে। ভাবি এদ্দে তালত’বইন অক্কলে ডক মশকারী গরে। মদইন্না’র লাইল্যা ভাবি ঠেশ মারি হঁয়- মইনু’ত পেরাইভেট পরাই’ত যেই এক্কুবারে হাম গরি দিয়ে। এ্যানে দুনোজন’রে মানাই’ব। ওডানত বই পোয়াছা বে¹ুনে ভিসিআরত ইন্দি সিনেমা চাআর। পারাইল্লা যোয়ান পোয়া-মেইয়া অক্কলেও শতাই’ন্যায় গরে। পারাইল্লা ভাবি অ’লে বে¹ুনত্তুন বারা বেশি আনন্দ উলাশ গইত্তে-গইত্তে মইনদ্দিন’রে মে’দি দেয়ায়। আরা রাইট্টিয়া অনুষ্ঠান গরি ফজর অত্তত আরাইল্লা-পারাইল্লা বে¹ুন যাজ্জার ঘরত যাগই। কিন্তু এ’দিইন ওজর আজ’রর ভিতরও সৈদা বানুর মনত এক্কান দাগ থাই গেইঅই। পোয়ারে আশাগরি হলেজত পরাইলদে হ’ন চা-চ’রি ধরি’ব। তারপরে জাত বংশ চাই তাল্লায় ও¹া বউ আনিবো। কিন্তু চা-চ’রি গরিবার আগদি বিয়া শাদি গরাইবার ব্যা’পারঘান ইবাত্তুন গম ন লাগের। ত’ ক্যান গরি’ব পোয়ার মুখর ইক্কা চাই মানি লোয়া পরের।
সুখতারারে বউ বানাই ঘরত আ’ননর পর নোয়া বউর মুখ চাইবাল্লাই পচিম পাইরগ্যা মেইয়াপোয়া অক্কল বে¹ুন কুইল্লা’র ঘরত আইয়েরে পুরাই গেইঅই। তই আস্তে আস্তে মানুজ্জন হমন’র পর মইনদ্দিন এদ্দে সুখতারারে বাসরদে ভাবি অক্কলে। বে¹ুন গেলই সুখতারার মুখর আঁচল সরায় মইনদ্দিন। ছা’আত গরি নোয়া বউর মুখক্কান চায়। ছোড’ গরি পোছার গরে- ডল্লান নেকি তোয়াত্তুন? সুখতারা মুছকি আঁসি আঁচল্লান টানি দে। মইনদ্দিনও নাচোরবন্দা, এবার মাথার হরগান এট্টানে খুলি ফেলায়। সুখতারার মুক্কান টানি হাচে আনে।
সুখতারারে বিয়ার পর মইনদ্দিন অও’র বারিত যন-আইয়ুন বউথ হমাই ফেলাইয়ে। হ’ন দরহারি হাজে ছারা সিদ্দারপারার ইক্কা হেই নমারে। সুখতারাও জোরাজুরি গরি হ’ন ফল নপায়। ফোয়াইরগ্যা অ’লে মইনদ্দিনর অওর বারিলই নানান রহম হোচা মারে। কিন্তু মইনদ্দিনর পরানর ভিতর থাই থাই ইয়াড্ডইলা গরে। পিছন’র হতা মনত পইল্লে শরমে পরান যায়। কুনছুমা হাতু অ ঝিয়র জামাই আইলে ইয়ান-উইয়ান আনি দি ছাম্মত্তুন সরি যাগই। পোয়া পেডল্লই জিয়র জামাইর চাম্মে দেইলে মাইনসে হতা টানাটানি গরি’ব। এ’নে পুরান হতা মনত পইল্লে ভিতরে ভিতরে শরমে মরি যায়।
বিয়ার তিম্মাস বা’দে অঠাত এদ্দিন দুইরগা সন্ধ্যাবতী দৌরি-দৌরি বইনর অওরত যায়। তহন মইনদ্দিন আর সুখতারা মাত্র দুইরগার ভাত্তুন হেই ওইট্টে। সন্ধ্যাবতীরে দেই মইনদ্দিন সুখতারার ইক্কা চাই ভাত বাইত্ত হঁয়- এ্যাই সুখ, ইবারে আগে ভাতবারি দ। কিন্তু সন্ধ্যাবতী তরাতরি গরি হানে হানে বইন অরে হঁয়- মা’র অসুক লাগের, তোয়ারে তরাতরি যাই’ত হইয়ে। এ্যাই হতা ওনি সুখ চমকি ওডে। পোছার গরে- কিরে ক্যান অইয়ে দে? সন্ধ্যাবতী জোরে জোরে নিয়াশ ফেলাইতে ফেলাইতে জোয়াব দে- পেড় হ’রারদে বলে। গর্বিতা মা’র পেড হ’রানীর হতা ওনি সুখতারা বুঝি ফেলায় ক্যান অইয়ে দে। হতাঘান জামাইরে হইয়েরেই তরাতরি হর-ছোর গুছাই লয়। মইনদ্দিন ইতারারে রিস্সাত তুলি দি পারার চা’র দোয়ানত যাই বইয়ে গৈ। এ্যাডে তহন ডাই বাধি বুরা অক্কলে তাচখেলা হার।
বিয়ালে চা’র দোয়ানত বই মইনদ্দিন ফোয়াইরগ্যা অ’লর লয় গপ মারে। এ্যান সমত অঠাতগরি সন্ধ্যাবতী চাম্মদি আই থিয়ায়। কিছু পোছার গরিবার আ’গদ্দি হই ওডে- দুলাবেই আরত ও¹া ছোড’ বেই অইয়ে। হবর পওনর ফোয়ারে ফোয়ারে মইনু অও’র বারিত দৌরি যায়। ত’তনে মইনুর জলপইল্লা গুরা আলারে ধোয়াই ধোই নাই হাড়ি এক্কান তইলা হর বেরাই সুখতারা বুকল্লয় বেরাই ধরে। সুখতারার কোলত গুরা আলার মুখর ইক্কা ছাই মইনদ্দিন অঠাত চমকি ওডে! অভিখল আরে¹ুয়া মইনদ্দিন য্যান সুখতারার হোলত্তুন থাই চওগরে মিডির মিডির গরি তার ইক্কা চাই আঁসে।
[চট্টগ্রামী ভাষার বেশ কয়েকটি ধারার মধ্যে গল্পটি মূলত দনি চট্টগ্রামী ধারায় লেখা। তবে চট্টগ্রামী ভাষার অন্য ধারার লোকজনও গল্পটি পড়তে ও বুঝতে পারবে। তবে চট্টগ্রামী ভাষার লিখিত রূপ না থাকা ও উচ্চারণ জটিলতার কারণে এ গল্পে কিছু বানানা ভুল থাকা অস্বাভাবিক নয়।]
ঊর্ধ্বকমা (’) ব্যবহৃত শব্দগুলো পড়ার সময় (’)’র পরের বর্ণটিতে জোর দিতে হবে। (’) কে অর্থভেদে অ/আ/ই হিসেবে পড়তে হবে। শব্দার্থ: অইব- হবে, অঠাত-হঠাৎ, অড়ে-ওখানে, অ’রি- শাশুড়ি, অ’লে, অক্কলে- সকলে, অ’নত্তুন- আপনার, অ’লা-পাকঘর, আঁ-সাঙ্গা, আইজ হাইল- আজকাল, আইট্টে-হাঁটতে, আ’গদ্দি- আগেই, আঁড়ত-হাটে, আ’ড়া- হাঁটা, আজুইন্ন্যা-সন্ধ্যাবেলা, আঁত- হাত, আতিক্কা- আকস্মিক, আঁসি- হাসি, আরে¹ুয়া-আরেকটি, ওজর-আওয়াজ, ইক্কা-দিকে, ইঁন-এইসব, ইবা-সে, ইয়ান ওইয়ান-এটাওঠা, ইয়াত্তুন ভারা-এর চেয়ে, উজু-সোজা, উরুস্তুর-হুলস্থুল, এক্কেনা- একটু, এগজা-সবসময়, এতল্লায়- এ জন্য, এত্তুন-এখান থেকে, এ’থ- সে রকম, এ’দিন্যা- সেদিন, এদ্দে- এবং, এনেমত্তর-সঙ্গে সঙ্গে, এ্যারদি-ফাঁক ফোকর, এম্মাস-একমাস, ও¹্যা-একটা, ওট্টিল-ওঠেছিল, ওড়িত- ওঠতে, ওনা-শোনা, কুর-কুরাইন্যা- কুটকুটানো, কুরা-মুরগী, কি’হ- কি বল, গইল্লে- করলে, গইল্ল-করল, গম-ভাল, গরইগ্য-করেছ, গুরা পোয়া- ছোট ছেলেমেয়ে, চওগ-চোখ, চাইট্টাইতে-এপাশওপাশ করা, চুম্মারি থায়-চুপ মেরে থাকে, ছার-শিক্ষক, ছধনা-পরচর্চা, ছাম্মদি-সামনে, জাবুড়াই-ঝাপটে, টাক্ক্যুা-এক ধরনের সোজা লাঠি, ঠা’রি-ঠাহর করে, ড’র- বড়, ডইল/ড্ডইলা- মতন, ডাই-ডেকে, ডাই’ব-ডাকবে, ডাউক্কা অ’রি- পাতানো শাশুড়ি, ত্তুন-থেকে/কাছে, তুঁই-তুমি, তাত্তুন-তাকে, তেইর-তাহার, থাই থাই- থেকে থেকে, দ’ত- দাওয়াত, দে-দেয়, দুইরগ্যা-দুপুরে, দো’রইচ্ছা-কিশোরী, নান-মতন, নপারে- পারে না, নপায়-পায় না, নছায়-চায় না, নজায়- যায় না, ন’হায়-খায়নি, নপারে-পারে না, নলয়-নেয় না, নপাইরগ্যম-পারব না, না’ইর-নাভির, নেইজে-মধ্যে, পন্নার-পড়ালেখার, পরামস্ব-পরামর্শ, পোয়াছা- ছেলেমেয়ে, ফুজিত-শোধ, ফোয়ারে-সঙ্গে, ফোয়াইরগ্যা-বন্ধুবান্ধব, বউথ-অনেক, বাইরগ্যে-বেড়েছে, বা’ত থাহে-বাইতে থাকে, বেরা-বেড়া, বেইপুত বেইজি-ভাতিজা ভাতিজি, বেয়া¹ুনে-সবাই, বেয়া¹িন-সব, বেইন্যা- সকাল, নপায়-পায় না, বেচুত-সম্বিতহীন, ভাঁয়-ভেসে, ভাঁই-ভেঙে, ম’ল-কাবাড়ি, মে’দি-মেহেদি, মিক্কা- দিকে, যন আইয়ুন-যাওয়া আসা, যি’ন-যা, রাইন নপারে-রাখতে পারে না, রাইট্টিয়া-সারারাত, লই-নিয়ে, ল’তি-থেকে, লয়-সঙ্গে, লায়-জন্য, লাইলে-লাগলে, লা’দ্দে- লাগছে, লার-লাগছে, লারে-নাড়ে, শতাই’ন্যায়-দুষ্টামি, শ’রত-শহরে,স’জে-সহজে, স’ত-সময়ে, হঁই- বলি, হঁয়-বলে, হন’- কোন, হ’র- টক/কামড়, হর ছোর-কাপড় চোপড়, হ’রায়-কামড়ায়, হান- কান, হারি লই- কেড়ে নেয়।
http://www.somewhereinblog.net/blog/dolupotra/29217718

রইত্থার পোয়া চৈইত্থ- (চট্টগ্রামী ভাষার গল্প)

রইত্থার পোয়া চৈইত্থা
কাফি কামাল
বেইন্নাত্তুন লত জোরপইরগা চাদ্দোয়ানত ওজর আর ওজর। আরাইল্লা-পারাইল্লা জোয়ান পোয়াছা অলে খুইল্লা-জুইন্নার দোয়ান্নান তল পারি ফেলার। ইন্দি আডি যাইবার স’তি দইনপারার আবুলোছনে এক্কেনা হাপ্পুয়াই চায়। জেডত ভাইয়র পোয়া গুরা পুতুইন্নারে হাছে ডাই গুরা গরি পোছার গরে- অতু কি ব্যায়পার অ বাজি? এ্যাডে এ্যাত অই চৈ কা চলের?
গুরা পুতুইন্না আসিয়রে জোয়াব দে- নয় অদ্দা ভোডর গপ মারেদ্দে বেয়া¹ুনে।
উনিয়রে আবুলোছন লাম্বা লাম্বা হাই মারি হাট উজু যাগই। ভোড-টোড লই তাত্তুন এ্যান হনো আ¹রহ নেই।
এক্কেনা আগদ্দি ইউনিয়ন পরিষদর মেম্বারি ভোডর নমিনেশন পেপার জমা দি জোরপইরগা খুইল্লার চাদ্দোয়ানত আইয়রে বইস্সে নশু মিয়া ওরফে নশরত আলী চৈধরি। তেঈর ফোয়ারে পারাইল্লা হয়েজ্জন চাইমচাও আই বইয়ে।
নশু মিয়ারে দেই খুইল্লা গরম পানিদি কাপ ধুই গমগরি উ¹া চা বানাই আনে।
পুকপারার রইশ্শার ইক্কা চাই নশু মিয়া পোছার গরে- অডা রইশ্শা কি বুঝর?
রইশ্শা মুখত মিডা আসি দিয়রে জোয়াব দে- অ মিয়া চাইর’মিক্কা অনর নাম ওনিদ্দে ওদা।
আছা না?
আই অনল্লয় মিছা হতা হইয়ম নে!
নশু মিয়া এবার তার বিপাটির হবর লয়- তঈ, আইল্লা-জাইল্লার পোয়া অক্কলর হবর কি রে অডা?
এবার হয়েজ্জন ফোয়ারে জোয়াব দে- ইন কি হন অ মিয়া! রইত্থার পোয়া চৈইত্থা অক্কলে হত্তুন অনল্লয় হোড ধরেদ্দে।
চাইমচা অলর হতা ওনি নশু মিয়া পকেডত্তুন গোল্লিপ সিগেডর পেকেড বাইর গরি উ¹া ধরায়। তহন বেয়া¹ুনে এক্কেনা গরি ঢোক গিলে। যারাত্তুন বিরি-সিগেডর অইবভাস আছে ইতারা এক্কেনা হাশে। তই নশু মিয়ার ছাম্মদি কেয়াই সিগেড ধরাইতো স’স ন পায়।
কেয়াই কেয়াই দুরে যাই বিরি ধরায়। গুরা গরি গরি হয়- এবার কিন্তু জবরদস্ত লরাই অইব।
চাঁদারকুলর লাল বদিরন মিয়ারো পুরান ডুলাবইয়া। তে বিরিত টান মাইত্তে মাইত্তে কুদ্দুইচ্ছারে হয়- ওডা এবার ত মনে অয় হইল হজ্জিয়া ভালা অইব।
কেনে বুঝিলি- কুদ্দুইচ্ছা পোছার গরে।
দেইদ্দে রইত্থার পোয়ার ফোয়ারে আইজ-হাইল বউত মানুজ্জন ঘুরে।
থুওর, টেয়া হাইবাল্লাই হদিন এক্কেনা আডা-চলা গরেদ্দে। ভোডর আগদ্দি দে’বি দে কেয়া নাই। মিয়ারো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হতা হয়দে এদ্দুর স’স আইজো হাত্তুন অইয়ে ।

খ.
ছৈয়দালমের বাপ রমত আলী আগে পইত্তবছর নশু মিয়ারো বাগা জবিনত আল গইত্ত। ইয়ার আগে বউত বছর মিয়ারো আল-চাষর হামও গইরগে। রমত আলীর বাপও আছিলদে নশু মিয়ার দাদা বসসু মিয়ার হাচ ভক্ত। কিন্তু হদি¹িন সমাজিক ব্যায়পার লই হয়েব্বছর আগে মছইদর উডানত মাইনসর ছাম্মদি রমত আলীরে টাশ গরি চোয়ার মারগিল নশু মিয়ার ভাই হাশু মিয়া। এ ঘটনাত্তুন ল’তি ছৈয়দালমর মনত এক্কান খেয়াল আইয়ে। মিয়ারো চাইমচামি গরি ত হনো ফায়দা নাই। ইয়ার পরে মাইনসত্তুন ধার-হজ্জ গরি বিদেশত গেইল। এট্টানা হয়েব্বছর থাই কিছু টেয়া-পইশা হামাই দেশত আইয়ে। তহন দেশত খুব গন্ডোল চলের। আর্মির সরগারল্লয় আমামিলিগ-বিএমপিয়ে লরাই গরের। ছৈয়দালম বিদেশত থাইতে স-সঙ্গিয়া অক্কলত্তুন হবর পায়দে- হকসোবাজারত্তুন বরমাইয়া নানা রহম জিনিস চাডিয়া শরত বেলেগ গইল্লে পইত্ত চালানে দশ-কুরি আজার টেয়া হামন যায়। তঈ ছৈয়দালম বিদেশত্তুন থাই ঠিকগরে দেশত ফিরি কিছু এক্খান বেবসা-বাণিজ্য গরি দেশত থাইবাল্লাই। বিদেশত যেদিন হষ্ট এ্যানডইল্লা ফায়দা নাই। দেশত থাইলে ঘরত থাই বেয়া¹ুনল্লয় সময় হাডাইও টেয়া হামন যায়। তই দেশত আইয়নর পর ছৈয়দালম অদে-অদে হকসোবাজার-টেন্নাপত্তুন ইয়ান ওইয়ান বেলেগ গরা শুরু গরে। পইল্লা পথঘাট ন চিননর হারনে বেশী সুইধা গরিত ন পারে। ত হয়েব্বছরের ভিতর তার হোয়াল ফিরে। এ সমত ছৈয়দালম বেলেগ গরনর ফোয়ারে-ফোয়ারে ধানর গুদাম দে, এডে-ওডে হম সমত বেশি লাভ লই টেয়া হাডায়। তহন তে মেডি ধইল্লে সোয়া অয়।
পইশা-হরি অইলেও ছৈয়দালমর আচার-বেবারত হন পরিবত্তন ন আইয়ে। এলাহার সুইধা-অসুইধাত ঝাপাই পরে। মাইনসরে দান-হরাত গরে। উদা এলাহার মিয়ারো আদ্দে সিদ্দার মানুষজ্জন ছারা বেয়া¹ুনরে তে সাইজ্জ সযোগিতা গরে। এ্যাতল্লায় ওই দুই গোষ্ঠীর মাইনসেও তারে দেইন্নপারে। মানি লইন্নপারে। তারার গেরামত থাই কেয়াই তারাত্তুন বারা বরো অউক ইয়ান হন ডইল্লা মানি লইত ন পারে। কিন্তু আস্তে-আস্তে এলাহার মাইনসর মন জিতি লয় তে।
হতোদিন ধরিয়রে পারার জোয়ান পোয়াছা অক্কলে ছৈয়দালমরে ধরে। বার বার হয়- অদ্দা আইয়েদ্দেবার অনত্তুন মেম্বারিত থিয়ন পরিব। এলাহার হাম-হরচ এব্বেরে নর। বোডত্তুন কেয়াই হাম গইত্ত আইলে মিয়ারো পোয়া অক্কলে তারারে দোওরায়। এ্যাতল্লায় উ¹া গম মানুষ দরহার।
এ্যানগরি দিনর পর দিন তারে ফুইশ্শায়। নিজরার দুক্খ-দুদ্দশার হতা হয়। এ্যানে শেষ পইজ্জন্ত আরিত ন পারি ভোডত দরহাস্ত জমা দে ছৈয়দালম।
ভোডত থিয়নর পরত্তুন ল’তি তার পক্খে-বিপক্খে চধনা শুরু অইয়ে।
খুইল্লার চাদ্দোয়ানত চা হাইত দেই হরিনার নুরেশার বাপে উতুরপারার আইব্বার বাপরে হয়- অদ্দা আইব্বার বাপ- দেইক্খ নি?
আইব্বার বাপে জাইনতো চায়, কি রে অ ভাই নুরেশার বাপ, কি অইয়ে?
নশু মিয়াল্লয় ডুইশ ধইরগে দে ন দেহর না রইত্থার পোয়া।
থুওর! রইত্থার পোয়া চৈইত্থা হত্তে মিয়ারো পোয়াল্লয় পারেদ্দে। নোয়া নোয়া বাল জালাইয়ে ত, এ্যাতল্লায় এক্কেনা আদ্দি আদ্দি চাদ্দে এ্যারি।
ইয়ান হইদ্দে আই। অডা তোর বায় আরা জিদ্দেগিভর মিয়ারো ডুলা বইতে বইতে আতর চাম ফেলাই দিয়ে এহন তুই লাই¹ছ দে মিয়ারো পোয়াল্লয় ডুইশ!
মরিবাল্লাই অউলাদ্দে এ্যারি।
এইবার শিং ত ভাংগিব দে ভাংগিব, গুতা হাই হইজ্জা ওদ্দা পুল অই যাইবই। লরাই দইত্তে হানে-শিংয়ে ফোয়ান লায়।
আইচ্ছা- গম হতা তাত্তুন এ্যানগরি হ টেয়া অইয়ে দে ভোডত থিয়া পরেদ্দে?
টেয়ার হতা হই লাভ কি? আইজ-হাইল টেয়া ত ইয়াল কুরত্তুন অ অইয়ে।
পুরান্তি জবানার মাইনসে হইত দে নয় না- কেয়ামতর আগদ্দি অঘাট ঘাট অইব, অপথ পথ অইব।
খুইল্লার চাদ্দোয়ানত বই- উতুরপারার আইব্বার বাপ আদ্দে দইনপারার নুরেশার বাপ মিলি চা হাইতে-হাইতে বন্নায় গরে। আইব্বার বাপ এত্তে ল’তি মিয়ারো চাইমচা। অক্কল সমত মিয়ারো পোয়াছা অলে ডাইলে দোওরি যায়। তেঈর বাপও নাকি মিয়ারো লাইট্টাল আছিল। গোডা জিন্দেগিভর মিয়ারো পিছদ্দি দোওরি কি পাইয়ে পোছার গইল্লে হন জোয়াব দিন্ন পারিব। তারপরও মিয়ারো গীত ন গাইলে তারাত্তুন পেডর ভাত অজম নয়। আর দইনো বিলর হদ্দুর জাগা লই ছৈয়দালমর বাপ রমত আলী ওরফে রইত্থাল্লয় নুরেশার বরো হজ্জিয়া আছে। এ্যাতল্লাই ছৈয়দালম ভোডত থিয়নে তে খুশি অইন্নপারে। হবর পনত্তুন ল’তি যেন ছৈয়দালমর নামত পইত্তদিন এ¹রাস ভাত বেশি হায়। সুযোগ পাইলেই চাদ্দোয়ানত বই ছৈয়দালমর শেকায়েত গরে।

গ.
আজুইন্না জোরপইরগা খুইল্লার চাদ্দোয়ানর ছাম্মদি এক্খান আতভাংগা চেয়ারত ঠেংয়র ওয়র ঠেং তুলি বইয়ে নশু মিয়া। ছাম্মদি মানুজ্জন আডি যাইবর স’তি ডাম্মারে- অডা হি হবর? এক্কেনা থিয়া।
মিয়ার ডাক ওনি মু’ত্থর ভিতর আত্তুলি ছালাম দে এলাহার মাইনসে।
উতুরপারার আদ্দুল হরিমারে দেই হয়- অডা হরিমা আই যে মেম্বারিত থিয়াইয়ি জানছ নে?
জানি অ মিয়া।
তই ভোউটয়া দিছ।
হরিমা মাথা এ্যাম্মিকা গরি আসিয়রে জোয়াব দে- হোয়া ন পরিব অ মিয়া। অনরে ছারা আর হারে ভোড্ডিয়ম! এবার আরা ঘট্টিয়া বেয়া¹ুনে অনরে ভোড্ডিয়ম।
নশু মিয়া গলা ডর গরি হয়- মনত থাই যেন অডা। চাইচ হতা যেন লচ্চর নয়।
হরিমা যাইবাগইর পর নশু মিয়া গোস্সায় গরগরায়। অনরগনে হয়- আইল্লার পোয়া আবার আল্লয় হোড ধরে। ছৈয়দালমরে উদ্দিশ্শ গরি হয়- অডা তোর বাপ-দাদা চৈইদ্দ গোষ্ঠী আরো জবিনত আলহাম গইত্তে গইত্তে মাথার তুইল্লে চাম- আজিয়া তুই পোছার গরদ্দে নাহলর কি হাম। তুই আইস্সজদে মেম্বার অইবাল্লায়। ইন্দি আডি যাইবর সমত পত্থুয়া মানুজ্জন থিয়া গরায় নশু মিয়া। পোছার গরে- অডা তোরা দেইক্খছ নি- তার হান্ড?
কি অ মিয়া ক্যান অইয়ে?
হত্তর তার হইজ্জা। জইদারর পুতল্লয় বলি ধইত্ত চায়।
চাদ্দোয়ানর মানুষ অক্কল নশু মিয়ার হতা ওনি এক্কেনা অ-লয় পুরায়। কেয়াই কেয়াই এম্মিকা চাই আঁসে। তই যারা চাদ্দোয়ানত আজুইন্না-বেইন্না আড্ডা মারে তারা নশু মিয়াল্লয় ভোডত থিয়াইবার হারনে ছৈয়দালম বন্নায় গরে। দুই এজ্জনে নশু মিয়ার পিছদ্দি গুরা-গারা গরি মিয়ারো চৈইদ্দ গোষ্ঠীও উদ্দার গরে। আবার কেয়াই কেয়াই হাই ন হাই ছৈয়দালমর বন্নাই গরে।
দুইরগা পচিমপারার সোলেমান চা হাইতে হাইতে ছৈয়দালমর বন্নায় গরে। হয়- তার বায় হনো দিন চইদারি ন গরে আত্তে গইত্ত চাদ্দে মেম্বারি।
সোলেমানর হতা ওনি দইনপারার আদ্দুলাকিমে মাতি ওডে- এ্যান ন হইচ অ ভাই। চৈইত্থা অদ্দা খু¹ম মানুষ।
কেনে বুঝিলা তুঁই?
গত বছর আরার মছইদত মাইকর বেবস্থা গরি দিয়ে, পদ্মবিল ইসকুলর নতুন ঘর তুলি দিয়ে, পুকপারার মইন্নার পোয়ারে আসপাতালত ভত্তি গরাই দিয়ে। হ’চেয় এ্যানডইল্লা টেয়া-পইশা দি তে হারে সাইজ্জ ন গরে? হার বিপদত ন লাগে? এ্যানে অক্কল সমত কেয়াই বিপদদ পরি তার হাছে গেইলে তে হালি আতে ন ফিরায়। তার বউয়াও খু¹ম মাইয়াপোয়া। মাইনসরে বর লুইত-বাসনা গরে।
সোলেমানে আদ্দুলাকিমর হতা ওরাই দে- থুওর! বাঁ লর পোয়াত্তুন পইশা অইলে এক্কেনা জাতত উডিবাল্লায় এ্যানডইল্লা কিছু হরচ-বিরচ গরে।
অ ভাই মাইনসে গম গইল্লে গম ইয়ান হোয়া ন পরিব না?
যত হতা হইবা হ- আজার অইলেও নশু মিয়া বিটিশ আমলর হাশরত আলী ওরফে হাসু মিয়ারো পোয়া। হাল্লয় হাত্তুলনা দঁ।
তুলনা দিদ্দে নয়। এক্কেনা আক্কল-দানাই গরন উচিত। আইচ্ছা তুই হ’ত। তোরা যে মিয়ারো এত গুন-কীত্তন গস, তারা মাইনসল্লায় কি গইরগে? এক্খান ইসকুল-মদ্দেরেসা গইরগে না আর কিছু? এ্যান আদেনা- উরুম দি চা হায়। ফইররে ত হরাত পইজ্জন্ত ন দে।
এবার অন্য লাইনে আডে সোলেমান- মিয়ারো পোয়া মেম্বার অইলে এক্কেনা ডর গরি হতাও হইত ন পারিব কেয়াই। আজার অইলও হাসু মিয়ারো পোয়া। তেঈ মেম্বার অইলে, মাইনসে তেঈরে মানিব। মেম্বার ইশাবও তেঈরে মানাইব। চৈইত্থারে মেম্বার বানাইলে ত কেয়াই ইতারে ন উদ্দা মানিব।
আদ্দুলাকিম সজে ন চারে- অ ভাই মানন নমানন ত যাজ্জার ব্যায়পার। কেয়াই ন মানিলে কি ঈতারে জোর গরি মানন যাইব নে।
পাটির মাইনসত্তুন বেয়াক হতা ওনে ছৈয়দালম। কিন্তু মাইনসর মন বুঝিত ন পারে। জিন্দেগিভর মিয়ারো পাটি গরি তারা কি পাইয়ে ছৈয়দালম ইশাব ন পায়। আরা জিন্দেগি আরাইল্লা-পারাইল্লা অলরে ছুই হাইয়ে দে ওদু মিয়ারো আদ্দে সিদ্দার গোষ্ঠীয়ে। ত মাইনসে ইতারার পাটি গরে। চুপ্পে-চাপ্পে তারে ভোড দিব বলি হই দশজ্জনর ছাম্মদি মিয়ারো গুন গায়। এ্যাত্তিয়ারর জবানাত মিয়ারো গোষ্ঠীর হত নাম ডাক আছিল ঈনর গপ মারে। মাইনসর মন্নান আছলেই এক আজব হারহানা।

ঘ.
নমিনেশন পেপার জমা দনর পরত্তুন ল’তি নশু মিয়া আইট্টে-বইসতে হতায়-হতায় ছৈয়দালমরে অল¹ান্তি গরি হতা হয়। নশু মিয়া চাদ্দোয়ানত বই পারাইল্লা মাইনসরে ডর-ডর গরি হয়- আই অইলাম দে বসসু মিয়ার নাতি বাচ্চু মিয়ার পোয়া। আঁর দাদা আতিত গরি চলাফিরা গইত্ত। এহনো সাতকাইন্না আন্নানারো ঘাডার ছাম্মদি মাইনসে জুতা ঠেংতদি ন আডে। অথচ আর ডুলা বইয়ার রইত্থার পোয়া চৈইত্থা যে আল্লয় ডুইশ ধইত্ত আইস্সে তাদ্দাদা আরত গওর হাম গইরগে আরা জীবন। বেলেক হাম গরি দুয়া পইশা অইয়ে পল্লায় তাত্তুন, এহন মাইনসর হতা ধরি ভোডত থিয়াইয়ে। তোর অডা উতুর-দইন ঠিক আছেনি?
ছৈয়দালম নশু মিয়ার হতার হন জোয়াব ন দে। মাইনসে হইলেও আসিয়রে ওরাই দে। এ্যাদিন্না দইনপারার ছিদিক্কা বরত অসুইক্কা বুরা ছিদিক্কা ব’রে চাইত গেইল ছৈয়দালম। এ্যাডে নশু মিয়ার হতা উইট্টে আদ্দে তে আসিয়রে হয়- মানুষ কি ওবা আরা জিন্দেগিভর এড্ডইল্লা থায় যাগই না? এ্যাত্তে তারার বোয়াটা উরগিল বলি কি ছাম্মদি অন্য কেয়ার দিন আইন্ন পারে নে? হতা ওনি বুরা ছিদিক্কা বাপে ছৈয়দালমর মাথাত আত বউলাই দোয়া গরে। হয়- আল্লায় তোর আশা পুরা গরুগ।
এ্যাদিন্না মাঝরপারাত ভোড চাই ফিরিবর সমত ছৈয়দালম খুইল্লার চাদ্দোয়ানত ঘলয়।
দোয়ানর ভিতর যারা আছে বেয়া¹ুনে আত্তুলি ছালাম দি হয়- তোয়ারা কেন আছ? ভাই-বন্ধু অল আই এবার ভোডত থিয়াইয়ি। তোয়ারা আরে এক্কেনা দোয়া গরিবা। হন দোষ হাতা গইল্লে মাপ গরি দিয়। ভোডদ্দিন আঁর হতান এক্কেনা মনত রাইক্ক। ইয়ার পরে বেয়া¹ুনল্লায় চা’র অডার দে। বেয়া¹ুনে আত্তুলি তারে ভোড দিব বলি হতা দে।
ছৈয়দালম যাইবাগইর পর উতুরপারার মইজ্জাল্লয় আদ্দে দইনপারার শালম মাস্টরল্লয় তরহা-তরহি বাজে। মইজ্জা ছৈয়দালম বন্নায় শুরু গইল্লে শালম মাস্টর ঈয়ানর পতিবাদ গরে। হয়- ওবা তোয়ারা ত গমগরি হরাপ মানুষ! বেচারা এক্কেনা ভোডত নাইম্মে আদ্দে তোয়ারা বেয়া¹ুনে মিলি তার শেকায়েত গা শুরু গইল্লা, ব্যায়পার কি?
মইজ্জাও ঠেরা মানুষ। হয়- মাস্টর মানুষ ওবা অনে ভোডর কি বুঝিবা?
গোস্বায় শালম মাস্টর মুক্খান লাল অই যাগই। হয়- দুনিয়ার বেয়া¹িন উধা তোয়ারা বুঝ। আরা হত্তুন বুইজ্জম। মাইনসর ছাম্মদি হ একহতা, পিছদ্দি গেইলে হ আরেক হতা।
শালম মাস্টরর মনত আছে। যেদিন তে মেট্টিক পাশ গরগিল এ্যাদিন নশু মিয়া তারে দেই হইল দে- বা’লর পোয়া হত্তে মল অবি দে। হতায়ান উনিয়রে শালমত্তুন খুব হষ্ট লা¹িল। তঁ চুম্মারি ঈয়ত্তুন শরি গেইল গই। কিন্তু হবর পেইয়রে ছৈয়দালম শালমরে মাথাত আঁত বউলাই দিইল। হইল- গমগরি পন্না পরিচ অ ভাই। ডাক্তর-ইঞ্জিনিয়ার অইত পারছ পান। ডাক্তর-ইঞ্জিনিয়ার অইত ন পাইল্লেও শালম বিএ পাস গরি এহন এক্কান ইসকুলত মাস্টরি গরে।
তই কেয়াই ছৈয়দালমর বন্নাই গইল্লে শালম মাস্টরত্তুন হতা ইয়ান মনত পরে। এ্যাতল্লাই পতিবাদ গরে। কিন্তু হ জনল্লয় আর তরহা-তরহি গরা যায়।

ঙ.
আজুইন্না নশু চৈধরি আদ্দে ছৈয়দালম দুনোজন ভোডর মারহা লই উপজেলাত্তুন আইয়ে। দুনোজনর পিছদ্দি বিশ-পঞ্জাইশজন গরি আরাইল্লা-পারাইল্লা জোয়ান-বুরা মাইনসে মিছিল গরি আইস্সে। নশু চৈধরি তালা আর ছৈয়দালম চাবি মারহা পাইয়ে। নশু মিয়ার পিছদ্দি পিছদ্দি ঘুরেদ্দে বেয়া¹ুন মিয়ারো আগজ্জবনার পাইক-পেয়াদা অলর পোয়াছা আর নাতিপতি। দুনিয়ার লডবল বে¹ুন তার শারিদ। অন্য মিক্কাদি ছৈয়দালমর পিছদ্দি অক্কল ডইল্লা মানুষ আডা-চলা গরে। দইনপারার শালম মাস্টর যেন তার হতা হয়, রিশ্শাঅলা ইনুচ, পুকপারার ছালামত্তুলার পোয়া রমতুল্লাহ, উতুরপারার খোকন হলিবা বেয়া¹ুনে ছৈয়দালমল্লয় চলাফিরা গরে। মুখে মিয়ারো নাম গইল্লেও বেইল মত হতায়-হতায় ছৈয়দালমর নাম গরে। মাইনসর মতামত লরপান গরি নিজরার সমথন্নান হার ইক্কা ঈয়ান বুঝায় দে।
ভোড যত হাছে আইয়ে আজুইন্না-বেইন্না পইত্তদিন তত ওজর-আজর বারে। খুইল্লা আদ্দে জুইন্নার চাদ্দোয়ানত সক সময় মাইনসে গ গ গরে। রাতিয়া মানুজ্জন হাজ হামত্তুন ফিল্লেই পারায়-পারায় মিছিল অয়। পুকপারাদি যদি মিছিল ওডে- ‘আর ভাই, তোয়ার ভাই- ছৈয়দালম ভাই, ছৈয়দালম ভাই’, ‘ছৈয়দালম ভাইয়র মারহা কি- চাবি ছারা আবার কি’, ‘ছৈয়দালম ভাইয়র দুইনয়ন- এই এলাহার উন্নয়ন’ তহন দইন পারাদ্দি মিছিল ওডে- ‘আর ভাই, তোয়ার ভাই- নশু ভাই, নশু ভাই’, নশু চৈধরি ভালা লোক- তালা মারহায় দিয়ম ভোড’।
মিছিলর আবাজ ওনি পোয়াছা পন্নার টেবিলত্তুন ওডি পথত বাইরয়। মা-বইন অক্কলে ইঁক্কা হান পাতে। ইঁন দেই বুরা মুছলেদ্দিন আঁসে। নিজে নিজে হয়- নশু মিয়া ভালা লোক!
ইন্দি নিঝাব রাতিয়া মিছিলর আগদ্দি মাইক টেসটিং গরিবর সতি ডর গরি আবাজ অয়। আতিক্কা মিক্কা আবাজ উনি গাছর টেইলে-টেইলে পাইক পক্খি অলে ওজর গইত্তে-গইত্তে এই টেইলত্তুন ওই টেইলত উরি যায়।
রাতিয়া মিছিল বাইরইলেই পারার কুত্তা অক্কলে চিক্কারে। এ্যাদিন্না নশু মিয়ার মিছিলর মাইক ছারনর ফোয়ারে ফোয়ারে ঘাও ঘাও গরি ওডে মাদলক মুন্সিরো বাঘা কুত্তাউয়া। ইবার ডাক উনি পারার কুত্তা বেয়া¹ুন চাইর’মিক্কা এক্কু ফোয়ারে ডাই ওডে। ঘাও ঘাও বারে। মিছিল চাঁদারকুল প’ছিলেও কুত্তা অলর ঘাও ঘাও ন হমে। আরেদ্দিন দইনপারার নাছিরা বরো ঘাডাদি আডিবর সমত ইতারো বাক্কুয়া কুত্তা ইবা ঘাও ঘাও গরি হরাইত আইয়ে। নশু মিয়া কুত্তা দেই নাছিরা বরো চৈইদ্দ গোষ্ঠী তুলি গালালি গরে।
হন চোদানির পোয়ার কুওর রে। রাস্তাদি মানুষ আডিত ন পারে। অডা নইব্বা, হালিক্কা আউগ্গাই আয়। আরে কুওরে ধইরগে। আইজ-হাইল ফন্নির পোয়ায়ও কুত্তা পালে। হালিয়া পারার কুত্তা বে¹ুন বাইরগাই মারি ফেলাবি।
নশু মিয়ার মিছিল দইনপারাত্তুন উতুরপারা অই আইরাবাদ পইজ্জন্ত যায়। উন্দি ছৈয়দালমর মিছিল জোরপরইগাত্তুন পুকপারা ছারি চাঁদারকুল পইজ্জন্ত যায়। মিছিলর ফোয়ারে ফোয়ারে রিশ্শাতগরি নশু মিয়াও যায়। ছৈয়দালমও মাইনসরে আত্তুলি ছালাম দিতে দিতে ওয়াডর পইত্ত পারায় পারায় আডে। মাইনসত্তুন ভোড চায়।
ছৈয়দালমর ইক্কা মাইনসর জোয়ার দেই- নশু মিয়ার চাইমচা অক্কলে তার মারহা লই টিটকারি মারে। ছৈয়দালমরে চাবি চৈইদ্দা ডাহে। এ্যাদিন্না ছৈয়দালমর পাটি গরনে পুকপারার আদ্দু বারিরে হতায়-হতায় আইচ্ছা তোরছে ধুনে নশু মিয়ার ভাই হাশু মিয়া। মাইর হাই আদ্দু বারি হাইনতে হাইনতে ছৈয়দালমর হাছে আইয়ে। উনিয়রে ছৈয়দালম- আদ্দু বারির চওগর পানি মুছিদি হয়- অ ভাই হদিন এক্কেনা ধইজ্জ ধর।

চ.
এ্যানে মিয়ারল্লয় আদ্দে সিদ্দারল্লয় এ্যাত্তিয়ারর জবানাত্তুন লতি বনডাংগা। যেই হনো কিছুত দুনো গোষ্ঠীত পাড চলে। জাগা-জবিন, বিচার-আচার, সদ্দারি-মাতবরি লই দুনো গোষ্ঠীর ভিতর এত্তে লতি হজ্জিয়া চলি আইয়ের। চৈধরি গরুর লরাই দিলে সিদ্দারত বলি খেলা দে। চৈধরির পোয়াই বাজারত্তুন ডর মাছ কিনিলে সিদ্দারো পোয়ায় হসাইরে হয়- গরুর হলিজাগান ঘরত দিপেডাইছ। দুনো গোষ্ঠীর থাই-থাই হৈল-হজ্জিয়া বাজে। হবার দাংগা অই দইনো বিল এপ্পাটির মাথা আরেপ্পাটিয়ে ফাডি দে। কেইচ অয়, পুলিশ আইয়ে। কিন্তু হন্নানদি যেন দুনো গোষ্ঠীর এক্খান মিল আছে। হনো গোষ্ঠীই এলাহাত তারার বাদ্দি কেয়ারে মাথা জালাই উইট্ট ন দে। হজ্জিয়া লাগাইদি, মা’লা-মোহদ্দমা বাজাইদি ছইত্তুচ্ছান গরি ফেলায়।
গতবার ভোডর সতি এ্যাই পাডর হারানে নশু মিয়া এদ্দে সিদ্দার রফিক সিদ্দারর দুনোজনরে আরাই দি আইরাবাদর জালামত মুন্সী মেম্বার অই গেইল। ভোডর হয়েম্মাস বাদে অঠাত গরি রফিক সিদ্দার মরি যনে এবার সিদ্দারত্তুন কেয়াই ভোডত ন থিয়ায়। ন থিয়াইলে কি অইব। তারা হনো কেয়ার পাটিও ন গরে। হারন গতবার আরনর পর তারা এক্কান জিনিস বুঝিত পাইরগে। তারার হজ্জিয়ার হারনে আজিয়া ছোড মাইনসর পোয়া হমোতাত গেইয়ে।
এ্যাতল্লায় এবার ভোডর চাইদ্দিন আগদি অঠাত গরি সিদ্দাররত যায় নশু মিয়া। রাতিয়া চেয়ারত বই চা হাইতে হাইতে নশু চৈধরি এবার বাবুল সিদ্দারর দোয়া চায়। হয়- আরা হজ্জিয়া দনে দিন দিন ছোড মাইনসর পোয়া অক্কল মাথা তুলি থিয়াই যারগই। এবার আরাত্তুন ইয়ান এক্কেনা ভাবি চন দরহার। নশু মিয়ার হতা ওনি সিদ্দার বুরা মোজার আলী সিদ্দারে মাতি ওডে- ইয়ান হতা হরাপ ন হ ওবা। আইল্লা-জাইল্লার পোয়া অক্কলে আগড্ডইলা আইজ-হাইল মান মইজ্জদাও ন গরে।
নশু মিয়া সিদ্দারত যনর পদ্দিন বেইন্না অইতে মাইনসর মুখে মুখে অয়- এবার নাকি সিদ্দার গোষ্ঠীয়ে মিয়ার গোষ্ঠীল্লয় মিলি গেইয়ই। দুনো গোষ্ঠীর চাইমচা অক্কলর হতা উনি আরাইল্লা-পারাইল্লা অক্কল এক্কেনা ধন্দত পরি যাগই। তইলে কি এবার নশু মিয়া মেম্বার অইব নাকি?
সুযোগ পাই মিয়ারো চাইমচা অক্কলে দোয়ানে-পারিয়ে পচার গরে- এবার নাকি সিদ্দার গোষ্ঠীর হতার বারে গেলে পুকপারাত ঘরে ঘরে অইন জলিব। কেয়ারে থাইত ন দিব। পুকপারা বেউগ্গা নাকি সিদ্দারর সম্বত্তি। এজ্জনর হতা হারি লই আরেক চাইমচা হই ওডে- কি হচ অডা পচিমপাইরগা অল বেয়া¹ুন ত মিয়ারো ইক্কা অই গেইয়ে। এ্যাদিন্না নজ্জুয়ার পোয়া হইল দে এ্যাডে নাকি নশু মিয়া বাদে আর হন কেয়াই ভোড চাইত গেলে বাইরগাই ঠেং ভাংগি দিব।
মিয়ার চাইমচা অলর হতা ওনি পারাইল্লা মানুজ্জন ধন্দত পরে। কেয়াই কেয়াই মুখর ওয়র উরাই দিলেও বউত কেয়াই ডরায়। অইলেও অইত পারে। দুনো গোষ্ঠী বরো খেষ্টা জাত।
ধান দাইতে দাইতে পুকপারার সলামত আলী তার চাতো ভাই হলিমুদ্দিনরে হয়- ওইন্নচ নি অডা।
কি অদ্দা?
মিয়ারল্লয় নেকি মিলি গেইয়ই সিদ্দারত!
মাইনসে ত হোয়া-হুই গরের।
এমত্তা নাকি নশু মিয়ার পাটি ন গইল্লে ভিডাত থাইকতো ন দিব।
এ্যাই জবানা আছে না অদ্দা আইজ-হাইল। ইন এক্কেনা জডা মারেদ্দে এরি।
ন হইচ অ ভাই ওনে সাত্তল্লায় বলি যিন-ইন গরিত পারে। ত আগদ্দিন কি আছে না। আইজ-হাইল কেয়ারে কিয়ায় এ্যাত ন পুছে।
হলিমুদ্দিনও হতার অয়াল দে- দুখ গরি হাদ্দে এডে মাইনসত্তুন এ্যাত পুছিবার সময় হই।

ছ.
চাঁদারকুল ফইরাবারি মছইদর কমিটিয়ে বিশিদবার আছরর নোয়াজর পরে বডুক গরে। টইনর ছানি মছইদত গরম হাইল্লা মাইনসে গরমল্লায় নোয়াজ পরিত ন পারে। ঘামে ভিজি চচ্ছুইপ্পা অইযায় নোয়াজি অক্কল। দুয়া ফেনর বাতাসে হারি ন গরে। পারার তৈইপ্পা বাপে হতা তোলে। ওবা ভোড আইস্সে-চল এবার পাত্তি অক্কলর হাছে যাই। দুয়া-উ¹া ফেন-তেন আদ্দে এক্কান টাট্টির বেবস্থা গরিত পারি নে চাই। ইমাম সাবও তেঈর হতাত অ-লয় পুরায়। অনরা বেয়া¹ুন মিলি ধইল্লে ছৈয়দালম ভাই কমপারম ডর কিছু এক্খান দিব। তেঈ ত আত মেলা মানুষ। মাইনসরে ফেরত ন দে। কমিটির সভাপতি বুরা মানুষ। ত তারার হতাওনি হয়- তোয়ারা গেইলে চল রাতিয়া যাই। তারা জানে- ছ্ল মুইত্তে ধরা পরে। উন্দি উতুরপারা এ্যাবজো হানার ছিদিক আমদ মলই ছৈয়দালমর হাছে যাইবাল্লায় পোয়াছা বেয়া¹ুনরে হয়-অতুইন্না অক্কল তোরা রেডি থাইছ। রাতিয়া এক্খান জাগাত যাইয়ম।
দুনো পাটি রাতিয়া এক্কু সমত ছৈয়দালমর বারিত যায়। বেশী মানুজ্জন দেই ছৈয়দালম বেয়া¹ুনরে উডানত চেয়ার আনি বোয়া গরায়। এ্যাবজো হানার পোয়া অক্কল উডানত বিছাইন্না নোয়া তলইয়ানত বইয়ে। চা-বিসকুড হাইতে-হাইতে মুরব্বি অলে ছৈয়দালমর নানান গুন গায়। হয়- মেম্বার সাব হন চিন্তা ন গইরগ। এবার মাইনসে এচ্ছেইট্টা তোয়ারে ভোড দিব। যেডে যাই এ্যাডে উদা তোয়ার হতা। বেয়া¹ুনে হদ্দে- এবার ছৈয়দালমল্লয় নশু মিয়া পাইত্ত নয়। তঈ জালামত মেম্বার কিন্তু এলাহাল্লায় হন কিছু ন গরনে তেঈরে কেয়াই ভোড দিত নয়। বেয়া¹ুন এবার তোয়ার হতা হর। মাইনসে হয় দে- নয় না ওবা ‘লোকর মুখে জয়, লোকের মুখে হয়’। এ্যান ছোলাত টুট্টুই উ¹া ডাগ দে। টুট্টুইর ডাক ওনি বশিরা বাপে হয়- ওইন্ননি ওবা, টুট্টুইয়েও সাক্খি দের।
এবার তারা আস্তে ধীরে যাই হামল্লায় আইস্সে ঈয়ান তোলে। ছৈয়দালম উনিয়রে হয়- অনরা আল্লাই এক্কেনা দোয়া গইরগন। আই মছইদত ফেন দুয়া আদ্দে টাট্টি বানাই দিয়ম। টেয়া লাইলেও কিছু লই যাইও।
ছৈয়দালমর হতা শেষ ন অইতেই এ্যাবজো হানার পোয়া অক্কলে ছিদিক মলইর ইশারা পাই তারে ঘিরি ধরে। ছিদিক মলইও দাবি তোলে- অদ্দা আরার এ্যাবজো হানার ইক্কা এক্কেনা ন চাইবান না? ছৈয়দালম তারারেও নিরাশ ন গরে। হয়- তিন বস্তা চইল, উ¹া গরু দিয়ম। আর তোয়ারা আল্লাই এব্বার হতম পরাইবা। ইয়ানল্লায়ও টেয়া পাইবা। ছৈয়দালমর হতা ওনি তারা খুশি মনে ফিরি যাইবার আগদ্দি তাল্লায় আত্তুলি দোয়া গরে। ইয়ার পর জুমার নোয়াজর আগদি ছৈয়দালম ইমাম সাবোরে ডাই হয়- ওজুর আল্লাই এক্কেনা দেয়া গইরগন।
তঈ হদিন ল’তি জোরপইরগা চাদ্দোয়ান অইতে বেয়া¹ুয়া পোস্টারে ছায় যাগই। নশু মিয়ার পোষ্টারত ডর গরি এক্কান ছবি দি তালা মারহার উয়দ্দি পোষ্টারত লেহি দিয়ে- ‘ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী বাড়ির সন্তান, জনদরদী নশু চৌধুরীকে তালা মার্কায় ভোট দিন- এলাকাবাসী’। অন্য মিক্কাদি ছৈয়দালমর পোস্টারতও ছবি দিয়ে এক্কার ডঁর গরি। চাবি মার্হার উয়দ্দি লেহা- ‘বিশিষ্ট সমাজ সেবক, জনদরদী ছৈয়দ আলম ভাই আপনাদের দোয়া ও রায় প্রত্যাশী- ওয়ার্ডের সচেতন জনগণ’। মাইনসে পোস্টারর লেহা পরি নানা রহম মন্তব্য গরে।
পুকপারার হালিক্কা দোয়ানত বইয়েরে ভোডর গপ মারে হয়েজ্জন বুরা মানুষ। চইল আইনতো যাই লাইল্লা বরো মোনাইফ্ফাও ইতারাল্লয় জোডে। হয়- দেইক্খনি আক্কু ছৈয়দালমর পোস্টারত তার ছবিয়ান হত ফুইট্টে। মোনাইফ্ফার হতা শেষ নইতেই শইফ্ফার বাপে মুখ বেয়াডাই আঁসে। হয়- অডা রইত্থার পোয়া চৈইত্থার ছবি ফুডিলও কি, ন ফুডিলও কি। আইল্লার পোয়া হত্তে মেম্বারি গরেদ্দে। মিয়ারো পোয়ায় ধমকি দিলে তিনদিন ভাতর ছউন লগ ন পাইব দে এ্যাডে। তেঈর হতা উনি আদ্দু নবি সদরও আঁসি ওডে।

জ.
ভোডর আগদ্দিন মানুজ্জন বিদা গরি ছৈয়দালম লেইট্ট যায়। তহন রাইতর আরাইটা বাজে। ফজরর আজানর ফোয়ারে ফোয়ারে আবার উডি যন পরিব। ভোড কেন্দরত এজেন অলরে দি পেডা পরিব। পারাইল্লা মাইয়াপোয়া অক্কলরে কেন্দরত লই যাইবাল্লায় চাইরগান রিশ্শা ঠিক গইরগে। ইতারে পারায় পারায় দি পেডা পরিব। তেঈর পাটি গরেদে ইতারারে কেন্দরত হাম-তাম বুঝাই দেয়া পরিব। ভোডত দায়িত্ত লই আইস্সে দে পুলিশ-আনসার অক্কল্লায় হানা-ফিনার বেবস্থা গরা পরিব। নশু মিয়া যেন ইতারারে ব্যাবার গরিত ন পারে। এ্যানে পুলিশ অলল্লয় হতা-বাত্তারা ঠিগ ঠাগ অইয়ে। যেন নশু মিয়ার মাইনসে হজ্জিয়া-ফজ্জাত গরি ভোড কেন্দরত গন্ডোল গরিত ন পারে। ভোডার অক্কলরে যেন উমকি-ধমকি দি কেন্দরত্তুন দোওরাইত ন পারে। হারন দইনপারা ভোডর ব্যায়পারে হতা হাডাহাডি দি নশু মিয়ার পাটি অলে ছৈয়দালমর পাটির তিনজনরে মারি মাথা ফাডি দিয়ে। রাতিয়া ইতারে ডাক্তর হানাত ভত্তি গরা পইরগে। এলাহার পোয়া অক্কলরে পইশা-হরি দেয়া পরিব। বউত হাম। ছৈয়দালম সেগুন গাছর নোয়া পালংয়ত লেইট্টে লেইট্টে বউয়রে হয়- ফজরর আজানর ফোয়ারে ফোয়ারে আরে ডাই দিবা। মনিরা বেগমও ভোডর হারনে হতোদিন ধরি ঠিম্মত ঘুম যাইন্নপারের। ইয়ার ভিতর সুযোগ পাইলে জামাইল্লাই আল্লার হাছে দোয়া চাইতো মছল্লাত বইয়ে। ওজু বানাই মছল্লাত বইসতে বইসতে জোয়াব দে- অনে এল্লাছা ঘুম যাই লন।
দিনভর দোওরা-দোওরি গরনর হারনে লেইট্টে মত্তর ছৈয়দালমর চওগত মরার ঘুম নামি আইয়ে। ঘুমত নাইজে সপ্পনত দেহে জোরপরইগা পেরাইমারি ইসকুলর মাড ভরা মানুষ। লাইন ধরি মা-বইন, পোয়া-বুরা ভোড দিবাল্লায় থিয়াইয়ে। পুলিশে বাশি মারি মারি মাইনসরে লাইন দরার। লাইনত বেয়া¹ুন ছৈয়দালমর পাটি। তারা এজ্জনে আরেজ্জনরে হয়- ওবা এবার চাবি মারহাত ভোড দিয়ম। হয়েজ্জন ভোডদি আই কেন্দরর হদ্দুর দুরে চেয়ারত বোয়া ছৈয়দালমরে হয়- চাবি মারহা ভোডদি আস্সিদে। ভোডার অলে হদ্দে উনিলাম- এলাহাত থাইকত মনে হইলে নশু মিয়ারে তালা মারহা ভোড দেয়া পরিব। কিন্তু আরা এবার তালা মারহা ভোড নদিয়ম। এ্যান সমত নশু মিয়ার পাটির হদুন পোয়াছা আইয়রে ছৈয়দালমর পাটি অক্কলরে মারি লাইনত্তুন বাইর গরি দে। হদ্দুর দুরে ছৈয়দালমর ক্যাম্পত অইন লাগাই দে। হয়েজ্জন কেন্দরত ঢুকি জোরগরি তালা মারহাত সিল মারে। ইন দেই ছৈয়দালম কেন্দরর ইক্কা দোওরি যাইতে যাইতে হই ওডে- অ বাইজ্জা হোদা। বেয়াক ত অনাল-বেনাল গরি ফেলার। ডর ভয় এক্কোর গরি ছৈয়দালম ডাম্মারে- তোরা এ্যান কা গরর লে অডা? যার ভোড তে দিব, যেডে মনে হয় এ্যাডে দিব। কিন্তু কেয়াই তার হতা ন উনে। মানুজ্জনও চাইর’মিক্কা দোওরা-দোওরি গরে। দুরে থিয়াই পুলিশ অক্কলে চাই থাই। এ্যান অবস্থাত পিসাইডিং অফিসার মাডত বাইরই ঘোষণা দে- আস্টশত ভোড পাইয়রে তালা মারহা নশু মিয়া মেম্বার নির্বাচিত অইয়ে। ঘোষণা উননর পর ছৈয়দালমর ঘুম ভাংঙ্গি যাগই। ঘুমত্তুন ওডি বইয়ে। মু’ত্তর ভিতর ঘুমর ঘোর হাডি যায়। পালংয়ত উডি বইয়রে দেহে- আরাইলর বাক্কুয়া রাতাউয়া টানি টানি বাক্দের আর মনিরা বেগম মছল্লাত পরি ঘুম যার।

শব্দার্থ
অউলাদ্দে- উচ্ছৃঙ্খলতা, অনরগনে- নিজে নিজে, অইন্নপারে- হতে পারে না, অনল্লয়- আপনার সঙ্গে, অসুইক্কা- অসুস্থ, অল¹ান্তি- তাচ্ছিল্য, অলয়- সায় দেয়া, আইল্লা জাইল্লা- চাষাভুষা, আউগ্গাই- এগিয়ে আস, আত্তুলি- হাত তুলে, আদেনা- কৃপণ, আদ্দি চাদ্দে এ্যারি- হাত বুলিয়ে চাচ্ছে আর কি, আছিল- ছিল, আরিত ন পারি- বাধ্য হয়ে, আসিয়রে- হেসে, আরেপ্পাটিয়ে- আরেকপ, ইতারাল্লয়- তাদের সঙ্গে, ইয়াল কুর- শিয়াল কুকুর, ঈনর- ও গুলোর, উদা- শুধু, উরগিল- উড়েছিল, উরুম- মুড়ি, এ¹রাস- একগ্রাস, এচ্ছেইট্টা- একচেটিয়া, এট্টানা- একটানা, এ্যাত্তিয়ারর- আগের, এমত্তা- এবার, এ্যাম্মিকা- নিচের দিকে, এপ্পাটির- একপরে, এল্লাছা- কিছুণ, ওইন্নচনি- শুনছ কি, ওনিদ্দে- শুনছি, কেন্দরত্তুন- কেন্দ্র থেকে, ঘট্টিয়া- ঘরশুদ্ধ, চধনা- পরচর্চা, চন- চাওয়া, চুপ্পে চাপ্পে- চুপচাপ, চচ্ছুইপ্পা- চুপচুপে, ছইত্তুচ্ছান- ছত্রখান, জালাই উইট্ট ন দে- সৃষ্টি হতে দেয় না, জোরপইরগা- জোড়পুকুরিয়া, টুট্টুই- টিকটিকি, টেইলত্তুন- ডাল থেকে, ডুইশ- প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ডুলাবইয়া- কামলা, ডাই- ডেকে, থুওর- ধুৎ, থাইবাল্লাই- থাকবার জন্য, দে’বি দে- দেখবি যে, দিপেডাইছ- পাঠিয়ে দিস, দোয়ান্নান- দোকানে, ধইরগে- ধরেছে, ন হ- বলোনি, ন গরে- করে না, ন গইরগ- করবেন না, ন গরনে- না করায়, ন আডে- হাটে না, ন লাগে- লাগে না, ন পুছে- গুরুত্ব দেয় না, নিঝাব- নির্জন, প’ছিলেও- পৌঁছালে, পুরান্তি- পুরান, পাইরগে- পেরেছে, ফেলার- ফেলছে, ফুইশ্শায়- ফুসলায়, বন্নায়- বদনাম, বা’লর- মুর্খের, বুইজ্জম- বুঝব, বিছাইন্না- বিছানো, বেয়াডাই- ভেঙায়, বেলেগ- চোরাকারবার, বোডত্তুন- ভোট থেকে, ভোউটয়া- ভোটটি, ভোড্ডিয়ম- ভোট দেব, মছইদত- মসজিদে, মছল্লাত- জায়নামাজে, মলই- মৌলভী, মাইনসত্তুন- মানুষ থেকে, মারেদ্দে- মারছে, মিয়াল্লয়- মিয়ার সঙ্গে, যাইন্নপারের- যেতে পারছে না, রইত্থার পোয়া চৈইত্থা- যে কেউ, রাইক্ক- রাখবেন, রাতাউয়া- মোরগ, লইন্নপারে- নিতে পারে না, লচ্চর- নড়চড়, লুইত বাসনা- মেহমানদারী, লাইট্টাল- লাঠিয়াল, লা¹িল- লেগেছিল, লেইট্ট- শুইতে, শেকায়েত- সমালোচনা, স-সঙ্গিয়া- বন্ধুবান্ধব, সপ্পনত- স্বপ্নে, সমথন্নান- সমর্থণ, হদি¹িন- কতগুলো, হাত্তুলনা দঁ- কার তুলনা দিচ্ছ,হামন- কামাই, হাল্লয়- কারসঙ্গে, হোড ধরে- প্রতিযোগিতা।
 http://www.somewhereinblog.net/blog/dolupotra/29308494

মার্ বদিয়ালম (চট্টগ্রামী ভাষার গল্প)

মার্ বদিয়ালম
কাফি কামাল

ক.
আঁফেনামারর বাদে বউতন খেলা অইলেঅ গোল গরিত নপারি দুনঅ পাঁটির মাথা হারাপ অইগেইঅগই। বঅল খেলা বাদ্দি দুনো পাঁটির ফিলিয়ার অক্কলে ঠ্যাংবারি মারামারি শুরু গইরগ্যে। রেফারিএ অলইদ কাড দেহাই কুল নঁপায় পাআন অবস্তা। দুনো পক্কর দশশক অলেঅ মা-বইন তুলি গালাঁলি শুরু গরি দিয়ে। য়েন সঁত অটাতগরি বে¹ুনরে ম্যাচিকহাণ্ড দেয়াইয়ে পাআন গরি লালদলর চাইজ্জনরে হাড়াইয়েরে সবুজদলর বদিয়ালম বঁললই লালদলর পেলান্টি বক্সর ভিতর ঢুকি যাগই। এহন গুলিত্তুন ছুড়াইত পেল্লেই গোল অইজারগই। য়েন সঁত মাড়র দইনপারত্তুন হঅন এজ্জন্যে ডাক মারে- র্মা বদিয়ালম। মুঁঅত্তর ভিতর ভাইরাসন্নান বেয়া¹ুনে ডাক মারে- র্মা বদিয়ালম। ইয়ারমদ্দে বদিয়ালম চম্মুক পাতাঁইরগ্যা বলত লাতি মারে। বদিয়ালম কিছু বুঝি ওড়নঁর আগে চাইরমিক্কাত্তুন আবাজ ওড়ে- গো ও ল...।
অটাতগরি গোলহাই বেচওত অইযাগই লালদলর পিলিয়ার অক্কল। রেফারীঅ ফুওত গরি বাঁশি বাজায় দে। সবুজ দলের পিলিয়ার অক্কলে ততনে বদিয়ালমরে হাদত তুলি নাচানাচি শুরু গরি দিয়ে। ওইক্ক্যা মুঅত্তর ভিতর টাডাল পরইগ্যা হাজুর গাছর নান আমাত দর্শকঅক্কলও অই চই শুরু গরে। কিন্তু গোল অনঅর পর লালদলর পিলিয়ার অক্কলে ওগ্যারপর ওগ্যা ঠেংবারি মারে বদিয়ালমরে। তিন-চাইরবার ঠেংবারি হেই বদিয়ালম ল্যাংগাইতে ল্যাংগাইতে মাড়ত্তুন বাইরই যাই। তার বদইল্যা আরজ্জন নামে। বদিয়ালম যহন মাড়ত্তুন বাইরর তহন মাড়র চাইরমিক্কাত্তুন আবাজ ওড়ে- র্মা বদিয়ালম, র্মা বদিয়ালম। এজ্জনর মুখত্তুন অন্যজনে হারি লইতে লইতে এহন বেয়া¹ুনর মুখত এক্কান হতা- মার বদিয়ালম। চারপাআলদি মাইনস্যর মুখত নিজর নাম ওনি বদিয়ালমর বুক্কান ফুলি ওড়ে।
য়্যাদিনর গোলইবা দঅনর পর এড্ডইল্যামিক্কা হিরো অইগেইঅই বদিয়ালম। রাস্তা ঘাড়ে আর দোয়ানে পারিএ তারে দেইলে এহন মাইনস্যে হাতিল তোয়াজ গরে। চারমিক্কা তান্নাম ছড়াই গেইঅই। মাইনসে কিঅল্লাই মার বদিয়ালম হতা শুরু অইয়ে য়্যাই হতা নজানে। ইয়ান জাননঅর দরহারঅ মনে ন গরে। এজ্জনর মুখত্তুন আরেজ্জন গরি বেয়া¹ুনে হতাইয়ান মুখল্লই ফেলাইয়ে। ভালা-মন্দ যেহনঅ হতাত এহন হতায় হতায় বেয়া¹ুনর মুখত্তুন ফট গরি বাইরঅই যাগই- মার বদিয়ালম। পইল্যা পইল্যা মাইনস্যর মুখত নিজর নামওনি খু¹ম লাইগ-দ। আস্তে আস্তে এড্ডইল্যা মিক্কা গাইলর মত লা শুরু গরইগ্যে। বদিয়ালম যেড়ে যায় এড়েই হতা ইবা ওনে। হন গুরুত্বপুন্ন বৈড়খত বইলে এডেঅ কেয়াই না কেয়াই হই ওড়ে মার বদিয়ালম। দোয়ানে পারিয়ে বই এক্কাপ চা হাইবার জও নেই। বাজারত আড়িবার জও নেই। মাইনস্যে কি এক্কান যে মজা পাইল ইয়ান বদিয়ালম বুঝিত ন পারে।
এদিন্না মছইদদ গেইয়া শুক্কুর বাইরগ্যা জুমার নোয়াজ পরিবাল্লাই। ইমাম সাআবর হোতবার মাজঅদি পারাইল্যা সদ্দার অঅলে মছইদল্লাই ট্যায়া-পইসা তোলা শুরু গইরগ্যে। এক্কান আঁজি নোমালঅরে দুইজনে চাইরহোনাদি ধরে মুছল্লির হাতারে হাতারে আড়ি আড়ি টেয়া তোলা শুরু গত্যেই ইমাম সাবে হোতবার জোর হমাই দে। যেএন হোতবা শেষ অইতে অইতে পুরা মছইদর টেয়া তোলা অয়। সদ্দার জইরদ্দিন ও আইলামদ হাতার ঘুরি বদিয়ালমর চাম্মদি আই থিয়াআই। বদিয়ালম এক্কান দুইটাইক্কা নোড় ফেলাঅনর পোয়ারে পোয়ারে চদ্দার অক্কলে মারহাবাজগাত হঁই ওড়ে মারবদিয়ালম। ফোয়ারে ফোয়ারে আরঅ হয়েজ্জনে হই ওড়ে মারবদিয়ালম। শরমে বদিয়ালমঅর গদ্দেনাআন কাড়ি পরিযাইতঅ চায়। কেয়ারে কিছু হঅইতঅ নপারে, সইত ন পারে। তই বদিয়ালম এম্মিক্কাঅই থায়। বঅল খেলার মারবদিয়ালম যে আল্লা-রসুলর নামন্নান মাইনস্যে হতায় হতায় ঠোঁটর আগাত তুলি রাইব ইয়ান বদিয়ালমে বুঝিত ন পারে। পইল্যা হদিন গমল্লাই লও এখন গাইলর ডইল্যা লাগে।
হদিন আগে বদিয়ালম চিরিঙ্গাত্তুন ঘরত আইবস্বত্যি আরেক্কান ঘটনা দেই নিজেঅ আঁসি ওড়ে। বুইরগ্যা ও¹্যা বাইন্নাচরাত্তুন গাড়িত ওড়ি ভারা দিবস্যত পাচটেয়া হম দিতঅ চায়। গারির হন্ডাকটারে হনঅ ডইল্যা বুরইগ্যারে বুঝাইত নপারে। বুইরগ্যার একহথা, বেশি কিল্লাই দিঅম? হন্ডাকটারে হয়- ওবা আই তোয়ারে ডাইরে¹ারিত গরি লইজাইর ভারা কিল্লাম হম দিবা? বুইরগ্যা মুখর হতা হারি লই হঅয়- তোর গারি থিয়াই থিয়াই যাইতে যাইতে মাইনস্যর দিন খাইফেলার। চিরিঙ্গাত্তুন বাইন্যাচ্ছরা আইতে দুইঘন্টা ফেলাইয়ে। হন্ডাকদারও নাচোর বন্দা। ফোয়ারে ফোয়ারে জোয়াব দে- দুইঘন্টা আঁর গারির ছিট দহল গরি রাইখ্য আরঅ দুইঘন্টা লাইব। ঘন্টা ইসাব ছিটভারা দিলে আরও বেশি টেয়া দেয়া পরিব। এ্যাঁন গইত্যে গইত্যে অটাৎ এজ্জনে বুইগ্যার পলই হন্ডাকদারঅরে ধমকায় ওড়ে। এই বেড়া জুয়ুন দিয়ে ও্যঁওুন ল। আরেজ্জনে ডাক মারে- মারবদিয়াল। মুঅত্তর ভিতর জোয়ান হয়েজ্জন পাসিন্দার হন্ডাকদারলই আতিআতি শুরু দে। এতক্কন ধরি ইঁতারার হান্ড হারহানা দেহি বদিয়ালম চুম্মারি মনে মনে আঁসে।
ইয়ার তিন সপ্তা বাদে অজ ভিসা লই সদিয়ারব যাগই বদিয়ালম। কিন্তু তে সদিয়ারব গেইলে কি অইব, র্মা বদিয়ালম ভাইরাসঅ মুখে মুখে দেশ-দুনিয়া বেয়া¹ুয়া ছাইর অইযাই। এ এক হতা লই হতমিক্কা হত মানুষ বেইজ্জত অয় তার হনঅ ইসাব-নিয়াশ নাই। হত্তুন উৎপন্ন অই হড়ে যার, হারে শরমিন্দা গরের... এক আজব হারবার।

খ.
জোরপইরগ্যা ইউনিয়নের ছবারর নির্বাচিত চেয়ারমেন বদিয়ালম চৌধুরী। যুদ্ধর পরততুন অইতে প্রত্যবার বদিয়ালম চৌধুরীকে কেয়াই আরাইত ন পারে। তেই গরেদে শেক মুজিবর পাআটি-আমামিলীগ। কিন্তু এলাকার বেয়াক মাইনস্যে তেইরে খুব পছন্দ গরে। গোস্বাঅলা বদিয়ালম চেয়ারমেন কেয়ার ইক্কা চোখ লাল গরি চাইলে ইতার থিয়াত পেশাব অই যেইতই। তই আইজকাইল আগর এ্যাই ঠাট নেই। আইজকাইলর জবানার পোয়া অক্কলে আগরনান আদব-হাইদা ন শিখে। মুখর ওপর নানা ডইল্যা মন্তব্য গরি ফালাই ফট গরি। পইল্যা পইল্যা পোয়া-চাঅলরে ধঅক-তঅক দিত। কিন্তু উল্ডা দেই সয্য গরি লয়। আজার অইলেও রাচনীতি গইল্যে এরে-ওরে মাইনস্যর ঠাট্টা মশকারীঅ ওনা পরে। এদিন্যা বদিয়ালম চেয়ারম্যান হঁডে বিচারত্তুন আই হালা মিয়া মেম্বারর দোয়ানর সাম্মদি থিয়ায়। চেয়ারম্যানরে দেঈ হালা মিয়া মেম্বার মেছিয়ার অক্কলে ডাম্মরে- এই চেয়ারম্যান সঁঅরে এক্কান চেয়ার দে। চেয়ারম্যান চাদ্দোয়ানর মুখত বাআদ্দি রোডঅর ওঅর বইয়ে। আস্ট-দজ্জন মানুষ চেয়ারম্যানঅরে ঘিরি ধরি থিয়ায়। জলিল মাস্টাররে দেঈ চেয়ারম্যানে ডাহদির চেয়ারগানত বঈসত হঁয়- ওবা মাস্টার সাব বঈঅন।
জলিল মাস্টার চেয়ারগান টানি লই চেয়ারম্যানর ডান সাইডদি গরি বঈয়ে...
আজিয়া বিচার-আচার হডে আছিল্?
আন্নহইয়ন মাস্টার সাব... ওই সাতঘইরগ্যা পারার টেন্ডইল্যার বারির জাগা-জবিনের কেইচ ইয়ান লই আঁর চেয়ারম্যানি শেষ অই যেইবগই। দুনো ভাইয়র কেয়াই কেয়ারে এস্সুতা ছারি দিতে রাজি নয়। ওদা ওদা আরে ডাহি বিচারত লইজায়... আতত-পঅত ধরি ভাত হাবায়। নানান ডইল্যা পেজর হতা উইনতে উইনতে আছল হাম্মান নঅয়। তঈ আজিয়া আই হই আস্বি... এইবার বিচার ন মানিলে তারারে লাম্বা ডেকর ভাত হাবঅনর ব্যবস্থা গরইগ্যম। চেয়ারম্যান মুছকি আঁসিদি গোলদি থিয়াইয়া মাইনস্যর মুখর ইক্কা চায়।
চেয়ারম্যানঅর মুখর হতা শেষ অঈ ফরাইত ন পারে চেইমচা অক্কলে এ্যাই হতা হারি লয় হঈ ওডে- চেয়ারম্যান শা গম হতা হইয়ে। তারা দুনো ভাইঅল্লাই এলাহার মানুষ শান্তিত থাইন্ন পারের। ওদা হজ্জিয়া আর মারামারি। দেশত তারা বাআদে য্যেন আর মানুষ নেই।
বট্টইল্যা পারার গুনু মুন্সি ডাহদি আঁড়ি যাইবার সঅত চেয়ারম্যানরে ডঅর গরি সালাম দে-আচ্ছালামু আলাইকুম চেয়ারম্যান সাব। ক্যোন আছন?
গমাছি... তঈ তুই হত্তুন আইসত্যা লাগইগ্য দে... চেয়ারম্যান জাইনত চায়।
এক্কেনা পোয়ার অওরত গেইলাম দে...
কি বেয়াইরত দঅত-থঅত বেশি হাইতা লাইগ্য ফল্লায়?
গুনু মুন্সি জোয়াব দেয়- নয় চেয়ারম্যান সাব বেয়াইরে চাইত গেইলাম দে... বেশি অসুক।
অ আইচ্ছা...
গুনু মুন্সি যঅনর পর চেয়ারম্যান আবার জলিল মাস্টারর লই রাজনীতির হতা তুলে...
দেইখ্য নি ওবা তোয়ারার ধানরছরা পাআটির নেতা অক্কলে দেশ্যান ক্যেনগরি খেই ফেলার?
মাইনস্য ত হঁর উন্নয়নর জোয়ার বাঈ যারগই বলি...
ধুর ওবা আরারে বরাদ্দ নদেদ্দেই হাম উদ্দা গরিন্ন পারির। এ্যাদিন্না পেপারত নঅদেহ না... আদ্দাইন্যা বিরিজ-হালভার্ল ডঅর ডঅর ছবি উদ্দা ছাবাই দি লেইখ্যে দে তোয়ারার নেতাঅলে আজার আজার কোটি ট্যায়া হেই ফেলাইয়ে...
চেয়ারম্যান সাব ঈন অইলদে আমামিলীগর অপপচার... জলিল মাস্টরে চেয়ারম্যানর হতার প্রতিবাদ গরে।
ঠিক এ্যান ছোলাত পাশদি মতলইপ্যার দোয়ানর ভিতর হারার ভিতর মারামারি লাইগ্যে। গালাগালি এদ্দে ওজর মিলাইয়েরে এব্বেরে ঐরান-বিরান হারবা। কি অইয়েদে ওড়া ছালআমঈদদ্যা এক্কেনা চাই আয় ত... চেয়ারম্যান তার চেইমচা ছালআমঈদদ্যারে ঈক্কা দি পেড়ায়।
মুত্তর ভিতর মারামারির ভিতত্তুন হন এজ্জনে চিল্লাই ওড়ে- র্মা বদিয়ালম।
ফোয়ারে ফোয়ারে চেয়ারম্যানর মুখত অঈশ্যার আধার ভাঈ পরে। হতদিন থরি মাইনস্যর মুখত ইয়াক্কান বোল লাগি রইয়ে। হতা নেই, বাত্রা নেই; যিয়ান ইয়ানত ফাল মারি ওড়ি হয়- মারবদিয়ালম। কি এক্কান আচ্চাইয্য ব্যায়াপার। জলিল মাস্টর হতা গুরাইল্লাই চেয়ারম্যানর মুখর ইক্কা চাই হয়- চেয়ারম্যান সাব কি সিগেট হঅন ছারি দিয়ন নেকি?
চেয়ারম্যন আমাত পকেডর আদ্দি সিগেটর পেকেডত্তুন উগ্যা সিগেট বাইর গরি দে... চেয়ারম্যানর চেয়ারা দেঈ মানুজ্জন আস্তে আস্তে যাজ্জার ইক্কা আঁড়া দে। যে জন তেঈর চেইমচা আছে তারাও আমাতত বই থায়।
ওন্দি সদিয়ারব যনর পর য়েড়েঅ বদিয়ালম দেশডইল্যা মাঝে-মাঝে হতা ঈয়ান ওনে। এলাহাত্তুন যুওন আইয়ে তারাঅ হতায় বাততারায় র্মা বদিয়ালম হই ওড়ে। আইজ-হাইল বদিয়ালমত্তুন আর আগড্ডইল্যা হরাপ ন লায়। সদিয়ারবতঅ যে হজন বদিয়ালম আছে তারাত্তুনঅ হতায়ান ওনি হস্ট লায়। এতল্লায় আস্তে আস্তে বদিয়ালমর গা সআ অই যা গই। হাজার অইলেঅ দেশড্ডইল্যা অত্থয় অত্থয় ত আর ওনা ন পরের।

গ.
ইন্দি হদিন আগে অছি জিয়াউদ্দিন আতঅর মোবাইলটি পকেডত রাইখতে রাইখতে আমিরাবাজ যাইবাল্লাই নিজর রুমত্তুন দরঅজার বাইরে ঠ্যাং রাইবার ফোয়ারে ফোয়ারে অই ছই গইরত্যে গইরত্যে এজ্জাক মানুষ আইয়েরে সাম্মদি আজির। জিয়াউদ্দিন কিছু পোছার গরিবার আগদ্দি এক্কু ফোয়ারে আস্ট-দশশুয়্যা ছালাম তার হানত বাজি ওড়ে।
আচ্চালামুয়ালাইকুম সার।
ওয়ালাইকুমচ্ছালাম... কি ব্যাপারে?
ছাআডর আতা গুটাইন্যা বদিয়ালম সিদ্দার হতা হই ওড়ে......সার অনর হাচে আস্বিদে...
কিল্লাই...
কেইচ গইত্যাম...
হাল্লাই...
সিবাইর পারার পেড়াইন্যার পোয়া মুশ্বিদ্যালাই...
কি গইরগ্যে দে ইতে...
আঁই আজঅর আলী সিদ্দার পারার হালামিয়া সিদ্দারর পোয়া বদিয়ালম সিদ্দার। আর এ্যাই ছোদানির পোয়া আঁরে ডাহের দে- মার বদিয়ালম। ছোদানির পোয়ার সঅস বারি গেইয়ে... আই তারে লম্বা ডেহর ভাত হাবাইত চাই অছি সাব।
বদিয়ালম সিদ্দাররে অছি জিয়াউদ্দিনে মুখচিনা ছিনে। বিভিন্ন মাইস্যর পোয়ারে কেইচ গইত্য আর সাক্কি দিতে আইয়ে। পুরান হাইল্যা গপ মারে আর নিজর বংশ লই গওরব গরে। হতায় হতায় মাইনস্যরে টিককারি মারে। তই মার বদিয়ালম হতাআন অ অছি সাবে প্রায় ওনে। মাইনস্য কিল্লাই হয় বুজিত ন পারে। কিন্তু ভাইরাসন্নান হতাআন মাইনস্যর মুকে মুকে ছড়াই যাইতে দেহে...। এ্যাই ঘটনা লই হত যাগত মারামারি বাজে। এ্যাদিন্যা অ মুন্সুপ বাজার এ্যাহতাল্লাই এজ্জনে আরেজ্জনরে মারি মাথা ফাড়ি দিয়ে। হবর পাআ গেইয়েদে মতিরন মলইয়ে নেকি দুনুপরে বোয়াই ঘটেনান ভাঈ দিয়ে।
অছি সাবে হয়- মার বদিয়ালম হইলে কি অইয়ে... ইয়ান ত আইজ-হাইল মাইনস্যর মুকে মুকে অই গেইয়েগই।
বদিয়ালম সিদ্দারে পতিবাদ গরে- কি হঅন অনে। তে আঁরে দেইলে দুরত্তুন হে হতা হঁই কুডকুডাই আঁসে। তে অইলদে আইল্যার পোয়া। তার বাপে আরত আইল্যাহাম গইত্যে গইত্যে মাথার চাম ওড়ি গেইয়ে আইজ-হাইল তে অ আঁরে টিটকারি মারে।
কেয়া তোয়ারে টিটকারি মারিব কিল্লাই...
সইদারব যাই টেয়া দুআ অইয়ে পঅল্লায় আইজ-হাইল তে মাইনস্য রে চোগে ন দেহে। আঁই তাচ্চোগ খুলি দিয়ম। তারে আঁই লম্বা ডেহর ভাত হাবাইঅম। অনে এক্কান কেইচ লইত হন সেগেন অফিসাররে...
কেইচ গরি কি গরিবা... ইয়াত্তুবারা তারে ডাহি মানা গরি দ। মার বদিয়ালম হইলে তোয়াত্তুন অহমান লাগে।
এবার বদিয়ালমর গলা আরঅ ডর অয়... সার তারে আই বউতবার মানা গরগ্যি। হ ন হাম ন অয়। টেয়া লাইলে হঅন... আঁই কেইচ গইরগ্যম। ফোয়ারে ফোয়ারে বদিয়ালম লড়বঅর অক্কলেও মাতি ওড়ে... সার কেইচ দেয়া পরিব। তে নইলে এ সোজা অইত নঅয়।
এবার জিয়াউদ্দিনে তারারে সেগেন অবিসারের এ্যাডে পাডাইদে। যঅন সেগেন অবিসার আদ্দু রাজ্জাকর হাচে যেই আঁর হতা হঅন। তে কেইচ এন্টি গরিব।
বদিয়ালম লড়বঅর লই সেগেন অবিসারের রুমর ইক্কা গেলে জিয়াউদ্দিন এক্কেনা নিয়াশ ফেলায়। কিছুক্কনর লাই ভাবনাত ডুবি জাগই। দেশত ইন হন হারবার আইস্বে! মাইনস্যে হতায় হতায় মার বদিয়ালম, জেটা আস্টুয়ানাল্লাই দিয়ে মারামারি, জেডা পওডার দিয়েয... ইন কি হয়। হতদিন বাআদে বাআদে ভাইরাছন্নান এইসব হতা ছড়াই যায় মাইনস্যর মুকে মুকে। দেশত ইন কি আইল... পকেডত্তুন উ¹্যা সিগেট বাইর গরি ধরাই হোড্ডা স্টাড দে...।
ওনদি সেগেন অবিসারর রুমত যাই বদিয়ালম সিদ্দারে চিল্লাই ওড়ে- কেয়া কেইচ লেহিন নপারিবা। অছি সাবে তোয়ার হাছে পাডাইয়ে ইতেঈর হতা হইবাল্লাই হই। এহন অঁনে হইতা লাইগ্যনদে কেইচ লেহিন্ন পারিব। আইনত নাই...। কিল্লাই আইত ন থাহিব? আর মানআনি হইব আর অনরাত্তুন আইনর ধারা ন থাহিব... ইয়ান কি হতা? টেয়া লাইলে হঅন...
আদ্দু রাজ্জাক শান্তি মিক্যা মানুষ। বদিয়ালমর হতার যুত্তি থাইলেও আইনর মারপেজত হঅন ধারাত কেইচ লেহা পরিব বুঝিত ন পারে। বদিয়ালমর হতায় তার হান জ্বলি যার। তহন থানার রাইটাররে ডাহে আদ্দু রাজ্জাক। এ্যাই আবু বক্কর এক্কান কেইচ লেহি দ তঅ। আই ফিরি আই সিন্নিচার গইরগ্যম। আবু বক্করর ওঅর দায়িত্ব দি আদ্দু রাজ্জাক টঅলত যাইবাল্লাই বাইর অয়।
আদ্দু রাজ্জাক বাইর অঁনর ফোয়ারে ফোয়ারে বদিয়ালম এক্কান শতি নোড বাইর গরি রাইটার আবু বক্করর হাত গুজি দে। এক্কেনা ভালা গরি লেইখ্য অভাই।
আবু বক্কর অসন্তুষ্ট অই হঁয়- এশ্বটেয়া দি কি অইব। এক্কান পাশ্বটেয়ার নোড বাইর গরঅ। এশ্ব টেয়া দি ভালা গরি লেইত পেত্তাম নয়।
বদিয়ালম পিডত আত বুলাই দে... টেয়া পইশা বেশি নেই অভাই...
কেইচ এন্টি গরঅনর পর বদিয়ালম সিদ্দার বট্টল্যা আঁডত যেই মজিতার চাদ্দোয়ানত ঢুকে। পিছে পিছে তার শারিত অক্কলেও ডুকে। বদিয়ালম ছ-আত কাপ চাআর অডারদি- মাতি ওডে। ওডা মজিতা এবার চোদানির পোয়া অক্কলে লাম্বা ডেকর ভাত হাবাইবার লাইন গরি আস্যিতে।
মজিতা জাইনত্য চায়- কি গইরগ্যদে অদ্দা?
চোদানির পোয়াঅলে আঁরে দেইলেই হয়- মার বদিয়ালম। কেইচ গরি আস্যি... এবার ডাঁই চউক না...
বদিয়ালমের কেইচর হতা ওনি, আগা-মাথা কিছু ন বুঝি; মজিতার দোয়ানর মেছিয়ার রইফ্যা ডাক মারে- র্মা বদিয়ালম।
শব্দ ইবা উনি মত্তর বদিয়ালম গোস্বায় গাল ফুলাই- মেছিয়ার রইফ্যার চইদ্যগোষ্ঠী তুলি গাইল দিতে দিতে বানাইয়া চা ফেলায় দোয়ানত্তুন বাইর অ যাই...

ঘ.
ইয়ারপরর রইবাদ্দিন বেইন্যা ফজরর নোয়াজ পরি বেয়া¹ুন আতগইরগ্যা পারা ছইদালম মুন্সীর উডানত যাই গোলদি থিয়াই। গত রাতিয়া মুন্সী র বারিত ডাহাইত আস্বিল। ডাহাতি গইত্য ঘরত ডুকিবাল্লাই তিন ইঞ্চিয়া সেগুনগাছর দরজা ভাঈ ফেলাইয়ে। হোরা বারিদি দরজা ভাঙ্গিবার ফোয়ারে ফোয়ারে মুন্সীর খুইল্লা পোয়া নুরুইছালাম থান পাই গেইয়ে। তে এক্কাড মারি ভাবিরে ঘরর ছাদত উড়ি যাইতই হয়- অ ভাবি ডাহাইত আইস্বে, ছাদত ওড়অগই।
নুরুইছালামর ডাক ওনি বুরা মানুষ মুন্সী ঘুমপাতাইল্যা উড়ি ডাম্মারে হরে ওডা?
আঁই অবা নুরুইছালাম ... ডাহাইত আইস্বে দে...
নুরুছালাম ডাম্মারনর ফোয়ারে ফোয়ারে ওডানত্তুন বদিয়ালম ডাহাইত ধঅক মারে... এ্যাই ছোদানির পোয়া, চুম্মারি থাক। নইলে গুলি গরি দিয়ম।
এ্যাতক্কনে মুন্সী তারা বুরাবুরি দুনঅজন পোয়ার বউঅরে লই পাক্কাগরর ছাদত উড়েগই। আর নুরুইছালাম পন্নার গরর বইয়ের তাকত্তুন এসিডর বতলল্যোয়া বাইর গরি আতল্লই হোনা হুইন্যা গরি থিয়ায়। যেন দরজার এ্যারদ্দি গুলি গইল্যে গত ন লাগে। ওনদি মুন্সীর বউয়ে কাদিয়ে ডাম্মারে- অপুত, অ নজরুল থুই ওড়ি আয়। ঈতারা ডাহাতি গরি লইজগগ্যই। কি এক্কান চিন্তা গরি নুরুছালাম এ্যাদ্দুরে ছাদত ওড়ি বাশর সিডিআন তুলি ফেলায়। চাইরমিক্কা ডাহাতির বারি যঅনে মুন্সীরত পাক্কা ঘর বাদিলেও সিরিগিন এ্যাইজ রেজি নগরি ফেলাই রেইখ্যে। বাশর সিরিদি ছাদত উড়ানামা গরে। ডাহাইত আইঅনে ঈয়ান হাজত লাইগ্যে।
এ্যাতনে দরজা ভাঈ ঘরত ডুক্ক্যয়েআই বদিয়ালম ডাহাইতর দল। তারা ঘরত ডুহি ডাকদে- এ্যাই মুন্সীর পোয়া মুন্সী, ছাদত্তুন লামি আয়। হডে কি আছে বাইর গরি দে। নইলে গুলি মারিদির।
নুরুইছালাম ছাদত্তুন চাইরমিক্কা হাউপ্পাই চায়দে ঘরর চাইরপায়ালদি মুখবাধা আপ্পেন পরা ডাহাইত অক্কলে পাআরা দের। চাপ্পইরগ্যা ভিতর দেহা যায় তারা কেয়ার কেয়ার আতত হাড়া বন্দুক আর লাম্বা লাম্বা কিরিচ। কিন্তু নুরুইছালামর ভাবি বুদ্ধি গরি ছাদর লাইট বন্ধ গরি দঅনে তারা বেয়া¹ুনরে দেইলেঅ তারারে কেয়াই ন দেহের। উনদি মুন্সিবারিত ডাহাতির আবাজ ওনি মাইকত নেইজে ডাহাতির খবর হইদে পারার মছইদর মুয়াজ্জিনে। আধারাইতত মাইকর আবাজ ওনি আরাইল্যা-পারাইল্যা অক্কলেও সতর্ক অই যায়। তই গোলাগুলি ডরে কেউ ঘরর বাইর নঅয়। কিন্তু ডাহাইত ডাহাইত বলি চিক্কার মারা শুরু অইযাগই চাইরমিক্যাদি।
বদিয়ালম ডাহাইতে ওমকি-ধুমকি দিতে দিতে তার ফোয়াইরগ্যা অক্কলে ঘরর জিনিষপত্তরো বেয়া¹িন ছদর-বধর গরি ফেলায়। দামি জিনিষপত্তরো যা আছে ঈইন বেয়া¹িন গাট্টি-বোচ্চা বাধি লয়। আর নুরুইছালামও সুযোগর অপোয় থায়। ডাহাতি শেষ গরি বাইরই যেবার মুওত্তত বদিয়ালম ডাহাইত্যা শিরির গোরাত আই ওমকি দি যায়- এবার ছাদত উট্যচগই আয়েদ্দেবার ছাদত ওড়িবার সময় নইদ্যম। এয়েন সত নুরুইছালাম এসিডর বতল্যো এ্যারঅদি ডড্ডপাই বদিয়ালম গত নেইজে ঢালি দে।
ও বাজিরে হই বদিয়ালম দৌর মারি বাইর অইত যাই দুয়ারর চকুডল্লই বারি হাই ঘুরি পরিজায়। আতিক্কা মিক্কা সদ্দারর এ অবস্থা দেই মুওত্তর মধ্যে বেকুব অইজাগই ডাহাইত অক্কল। পইল্যাদি তারা বুজি উডিত নঅ পারে সদ্দারত্তুন কেএন অইয়ে। যহন বুজিত্যেরগে তহন তাঁরার কি গরিব ইয়ানলই দুইফাট অইযাগই। এম্মিকাদি সদ্দারর এসিড হঅন অন্যমিক্কাদি মানুষ-জনর ওঁজর। ঘরর ভিতর যারা ডুইক্যে এ্যডিয়ার ভিতর এজ্জনে মুন্সী তারারে উদ্দিশ্য গরি হয়দে- চোদানির পোয়াঅক্কেলরে গুলি গরি।
আরেজ্জনে হয়দে- গুলি হারে গরিবি, আধারর ভিতর কেয়ারে ত দেহা ন জার।
তহনঅ বদিয়ালম ডাহাইত্যা গইরগ্যাইতে গইরগ্যাইতে ফোয়াইরগ্যা অক্কলরে হয়- আঁরে বাচা, আঁরে ফেলাই ন জাইচ।
কিন্তু এ্যতনে চাইরমিক্যা মানুষ-জনর ওঁজর বারি যঅনে ডাহাইত অক্কলে হওয়া-হুই গরে তারে (বদিয়ালম) লই ত সঅরে সঅরে শরি যঅন যেইত নয়। মাথাউদ্দা চম্মুক পোরা চদ্দাররে ফেলাই তারা তারাতারি ঘরত্তুন বাইর অই যাগই। ডাহাইত অক্কলরে যাইতগই দেহি নুরুছালাম চিক্কার মারে- অঁ ভাই-বেরাদর অক্কল এজ্জনরে হাই ফেলাইয়ি, তোয়ারা ওঁজঅ।
তহনঅ বদিয়ালম ডাহাইত্যা ফোআইরগ্যা অক্কলের পিছনে পিছনে বেশিদুর যেইন্নপারে। ইনদি ডাহাইত অক্কল যঅনর ফোয়ারে ফোয়ারে আরাইল্যা-ফারাইল্যা অক্কল মুন্সীর উড়ানত ভাঈ পরে। তারা দুওরাই বদিয়ালম ডাহাইত্যারে ধরি ফেলাই। ধরঅন দেরি আছে, মাইর শুরু গইত্যে দেরি নেই।
দইঈন পারার আদ্দুল গফফারইগ্যা হয়- চোদানির পোয়া অক্কলর জালাই ঘরত থাইন্ন পারি পান অবস্থা। মারি আট্টেং ভাঈ ফেলা।
উতুর পারার টেন্ডল মজিতা হই ওডে- বইনপুতর চউক্কুন তুলি ল।
আবার কেয়াই-কেয়াই হয়- পুলিশরে হবদ্দে।
কিন্তু হনে ওনের হার হতা। ডাহাইত সদ্দাররে ধরিত পেরইগ্যেদে মাইনস্যর মাথা আট্টিক নেই। যে জিয়ান আতত পেইয়ে ঈয়ান লই মার শুরু অইগ্যেগই। ততনে এসিডর জালা-পোরার বদলে ঠ্যাংঅর আঁডু আর আঁতর ঘিরা ভাঈ যাগই বদিয়ালম। জান ভিা চাইতে চাইতে বেওউশ অই যাগই তে। উতুর পারা মন্টু মিস্ত্রি বদিয়ালম ডাহাইত্যা রে চিনিত পারে। বাঁশহালির নুন্যাচরা তার বারি।
মন্টু মিস্ত্রি তারে চিনিত্তারী হয়- ঈতে ত চোদানির পোয়া বাশখাইল্যা বদিয়ালম ডাহাইত্যা। অম্মারে মা বউত বরঅ ডাহাইত।
ফোয়ারে ফোয়ারে আস্ট-দজ্জনে হই ওডে- র্মা বদিয়ালম।
আর পারাইল্যা যোয়ান পোয়া-ছা অঁলে বেওয়ুশ ডাহাইত বদিয়ালমের ঝাপাইপরি যে যিয়ান পায় ইয়ানলই দে...

ঙ.
দুইবছর বাদে বিদেশত্তুন আইস্যে বদিয়ালম। আইঅনর পর ঘর ঘওলা অক্কলে বদিয়ালমল্লাই বউ চা শুরু গইরগ্যে। বিশেষ গরি তার বদ্দা শফিয়ালমর দায়-দায়িত্ব বারি গেইঅই। চাইরমিক্কাত্তুন আত্তিয়-সজন অক্কলে বেরাইত আইয়ে। হয়েদ্দিন ধরি ঘরন্নেইজে মেজ্জান বইস্যে। কেয়াই রাধের, আর কেয়াই হার। চুলা আজুর নজার। এদিন্যা রাতিয়া ভাত হাই গপ মাইত্যে মাইত্যে বদিয়ালমর বিয়ার হতা ওডে। তার মাইজ্যাবু চেমন হাতু হই ওডে- বঁর ঘরত আইলে ক্যান আধার আধার লাগে। গম গরি হতা হইবার ওদ্দা কেয়াই নেই। এবার আঁর ভেই বদিয়ালমল্লাই ওগ্যা বউ আনি ফেলঅ। বঁরভেই শফিয়ালমর বউঅরে ঠেশ মারি ইবাই হতাআন হয়।
হঁইলে কিইবো, শফিয়ালমর বউয়ে পাল্টা ঠেশ মারে- চইদ্য দিন্না চান্নি এদ্দে তিন ভেন রেডিও কিনি আনোগই যাই... হতা হইবাল্লাই...
তারা ননন-ভউজে খোচাখোচা গইল্লেঅ আরগুনে বিয়ার হতা ওনি খুশি অয়। বদিয়ালমর কুইল্যাবু আজেরা হাতুন ফোয়ারে ফোয়ারে ওগ্যা মেইঅফোয়া দেহাই দে। বরভেই শফিয়ালমরে হয়- অদ্দা আই ওগ্যা মেইঅপোয়া দেখ্খি। আত্তু বেশি গম লাইগ্যে... রইশ্যার বঅর হালাপুতুনির নননর ঝি। উচ্চুরিকুলর জইদার পারা বারি। চলঅ অদ্দা হালিয়া বেয়া¹ুন মিলি চাইত যাই।
শফিয়ালম এম্মিক্কাত্তুন মাথা তুলে... চাইত ত জাবি বুঝিলাম, ইয়ার আগদি তারারে হবর দেয়া ন পরিব?
মেইজ্যাবু চেমন হাতু হই ওড়ে- জাত বনশ ভালা অওয়া পরিব। অজাইত্যা-কুজাইত্যা ঘরত আনি ভিড়া বরবাদ দেয়া জেইত নয়।
শফিয়ালমর বউ অঁলা গরত্তুন মাতি ওড়ে- হত বঁর জাত পল্লায়। আবার মাইনস্যর ভিতর অজাত-কুজাত তোয়ায়। শফিয়ালমর বউ আছিনা এদ্যে তেইর ননন চেমন হাতু এজ্জন আরেজ্জনল্লই ঠেশ মারামারি গরে।
মেইজ্জাবু এদ্দে ভউজর এ ঠেশ মারামারির ভিতর আজেরা হাতু বইনঅরে হয়- ইন ন হইঅ অবু। ঈতারা বেশি গম মানুষ। ঈতারার আত্মীয়-স্বজন বে¹ুন ভালা মাইনস্যর জাত। মেইয়াপোয়া ইবার আচার ব্যবারঅ আত্তু গম লাইগ্যে।
শফিয়ালম এতক্কন চুম্মারি থাক্কিল। গুরা বইনঅর হতা উনি বউঅর মুখর ইক্কা চায়।
আজেরা হাতু এবার বদ্দারে হয়- তইলে হালিয়া ছালামতালী উকিলঅরে দি হবর পাঠন না। আজেরা হাতুর হতাল্লই আরঅ জারা আছিল বেয়া¹ুনে এম্মত হয়। তইলে হালিয়া হবর পাঠাই আঁরা পঅরুয়া যাই।
পদ্দিন বেইন্যা শফিয়ালম ছালামতালী উকিলঅরে জইদার পারা মাইয়ারঅ বারিত পাঠায়। যাইবস্যত আতঅর ভিতর পনজাইশ্যুা টেয়া গলাই দি হয়- আঁরে বিয়ালর ভিতর হবর আনি দিবা, বুইজ্যনি?
ছালামতালী বউত পুরান উকিল। মুছকি আঁসি শফিয়ালমরে হয়- চিন্তা ন গইরগ্য।
ঠিক আছে যঁ তইলে, আল্লাহ ভরসা- শফিয়ালম আঁত্তুলি বিদায় দে।
ইন্দি বদিয়ালম রাতিয়া মেইজ্যাবু চেমন হাতু এদ্দে ছোড় বইন আজেরা হাতুত্তুন বউচাইবার হতা উনি আঁসিয়েরে হয়- ঠিক আছে, চাঁ তইলে তোরা। যিয়ানদি তোরাত্তুন গম লাই ইয়ানদি হতা হ।
বইনঅক্কলে তাত্তুন হনঅ কেয়ারে গম লাই কিনা পোছার গইল্যে বদিয়ালম এক্কেনাগরি চুম্মারি থাহে। তারপর হয়- আঁই বিদেশত্তুন আস্যি, আঁর পছন্দ হড়ে থাইব।
ভেইঅর জোয়াব ওনি বঈন অক্কলে বরভেইঅরে যাইয়েরে জানাইদে বদিয়ালমর হন পছন্দ নেই।
আজুইন্যা মগরিবর পর ছালামতালী উকিল শফিয়ালমরে উড়ানত আই ডাম্মারে- শইপ্যা অদ্দা আছঅনি?
গলার আবাজ ওনি আজেরা হাতু বাইরই হয়- অনে নে ওবা। আইয়ন, ঘরত আঁই বইঅন। আঁর বদ্দা বাজারত গেইয়েদে আইজু ন আইয়ে। বইঅন এতনে আইয়ের।
ছালামতালী পোয়াঅলর পন্নার ঘরত বইয়েরে ওগ্যা পান বানাই মুখত দে। ঘরর চাইর মিক্কা চায় মনে মনে হয়- ঘরে দুয়ারে ধন-দওলতর ছড়ক মারের। বিয়াআন হনঅ ঠিম্মতঅ ওয়াইত পাইল্যে আজার-চাইরাজার টেয়া আতঅত আইব।
ছালামতালী পান চাবাইতে চাবাইতে শফিয়ালম এদ্দে বদিয়ালম দুনো ভেই হতা হইতে হইতে এক্কু ফোয়ারে ঘরত আইয়ে। উকিলঅরে দেঈ শফি পোছার গরে- কি হবর আইনল্যা?
আলাহামদুল্লিহা... হবর ভালা...
ক্যান?
মেইয়ার বঅল্লয় হতা অইয়ে... মেইয়া বিয়া দিব। পঅরুয়া নাকি কি এক্কান হাজ আছে তই ইয়ারপদ্দিন তোয়ারারে যাইত হইয়ে। পোয়ার হতা পুচার গরগিল। ওননর পর তার ডগে-মগে বুজিলামদে লন ভালা।
হারণ এ্যার মইদ্যে বউ হ ওগ্যা চাইলেঅ চাইরমিক্কা মিলাই তারা আর চাম্মে ন আগায়। এজ্জনত্তুন গম লাইলেও অন্যওনত্তুন গম ন লায়।
মঙ্গলবাদ্দিন দুইরগ্যা জুওরর নোয়াজর পর দুইয়ান রিস্বাত গরি বউ এদ্দে দুই বইনঅরে লই শফিয়ালম জঈদার পারা বউ চাই ত যায়। চাইর হাটন ছরহায়াত লই তারা যহন জঈদার পারা আদ্দুল বারিরঅ উড়ানত যাই পঅছে তহন আদ্দুল বারি নিজে আঁয় তারারে ঘরত ঢুকায়। শফিয়ালম ছালাম দি তেঈর পিছে পিছে তারঅ বডু¹রত যেই বইয়ে। পুরানকি আমলর সোপা সেডত দেঈ তাত্তুন গম লাগে। বইনঅক্কলেঅ ঘরর চাইরঅমিক্কা চউক বুলাই চায়। হানিনর ভিতর তারের কয়েড্ডইল্যা ছ ছরহাআত আনি দে। ছালামতালী উকিলঅ তারা আইবার আগে আঁয় আঁজির অইয়ে। আজুন্যা আধার অই যারগই দেঈ চেমনহাতু তারা বারবার ছটফড়ায়। ওবা কি মেইয়াওয়া দেহাইবা না? আধারত্ব গম গরি দেহাঅ নজাইব। এত দেরি ক্যা গরের...
বউতন বাঁদে মেইয়ারে আঁজাই-পরাই তারার চাম্মদি আনে। দেঈয়ের বেয়া¹ুনর গম লায়। চেমন হাতু ইয়ান-ওইয়ান পোছারঅ গরে। অনে পরালেহা হদ্দুর গইরগ্যন? রাধা-ভারা গরিজ্জানন নি?
ছোড ছোড গরি ছেনুয়ারা গরবা অক্কলর পছনর জোয়াব দে।
হতা বাততারা গম লাগনর পর বর ভউজ আছিনা বেগম হোঁওরর পেজত্তুন উ¹্যা অঁড়ি বাইর গরি ছেনুয়ারার আঁতঅত পরাই দে।
ছেনুয়ারাকে ছোড় গরি হয়- কি রাজী আছঅনা?
মুছকি আঁসি দি ছেনুয়ারা এম্মিকা অই যাগই।
হদিন বাঁদে বদিয়ালম এদ্দে তার ফোয়াইগ্যা আদ্দু লইত্যা রাতিয়া জঈদার পারা যায়। ইয়ার আগঅদি ছালামতালী উকিলঅরে হবর পাঠায়। উকিলত্তুন খবর পাই আদ্দুল বারিঅ আঁস-কুরা জোয়ারাই, পইরত্তুন মাছ তুলি, ছ-ছঅরহাত বানাই এব্বেরে বেয়া¹িন থাহে থাহে গরি রাহে...
ছালমতালী মিস্টির হাটন্নুন লই সরাসরি ঘরর ভিতর ঢুকি যাগই। নিজেই দরজা খুলি আতিনা ঘরত বৈড়খ দে। জোনাফ্ফইরগ্যা রাতিয়া ভিড়া-বারি দেই খু¹ম লাগে বদিয়ালমত্তুন। ঘর-দুয়ারঅ সুন্দর। তারা ছঁরহাত-নাস্তা হাইতে হাইতে অড়াৎ গরি জেড়াত ভাবির ফোয়ারে ছেনুয়ারা ওরনার ঘোমটা টানি ছালামদি তারার চাম্মে আইয়ে।
বদিয়ালমল্লই ভাবিয়ে হতা হইতে হইতে ছেনুয়ারা চোরাচোগে দুইএব্বার বদিয়ালমঅরে চাইলই। মোড়ামোড়া ডোঁয়া এদ্দে হতা-বাত্তারা ওনি গম লাগে। মনর ভিতর এ্যায়াড্ডইল্যা মিক্কা গরে।
হতা হইতে হইতে ভাবিয়ে ছেনুয়ারার ঘোমটাগান আস্তে গরি সরাইদে।
ছেনুয়ারা এম্মিকাঅই থাইলও বদিয়ালমে তারে চাই ফেলাই। তাত্তুন গম লাই।
দুই-এট্টুওরা হতা হই তারা যঅনর পর আদ্দু লইত্যাত্তুন পুছার গরে- ওড়া কেন দেঈলি রে?
আত্তুন খু¹ম লাইগ্যে... তুত্তুন ক্যান লেইগ্যে হ।
বদিয়ালম জোয়াব নদি মিডা মিডা আঁসে...
বদিয়ালমে মেইয়াপোয়অ চাই এ্যাইয়নর পর এগারঅ দিনবাঁদে চাঁদর মাসঅর ইসাব-নিয়াশ গরি শুক্কুরবারে উকিল-আদ্দর দিন ঠি¹রে দুনুপ মিলি। য়েই মতন বেয়াক ঠিট্টাক গরে দুনুপ। হরঅচর হনঅ ঠিট্টিগানা নেই। যিন্দি যেদুউন হরচঅর হতা য়েয়াত্তুন বারা বেশি হরচ গরে বদিয়ালমে। শফিয়ালমঅ ভেঈয়র মন খুশি গরিবাল্লাই ইসাবত্তুন বেশি টেয়া হরচ গরি বেয়া¹িন ঠি¹রে। জঈদার পাইরগ্যা বেয়া¹ুনে পায়পান গরি নাস্তা-পানি পাডায়। বিয়া যত হাচে আইয়ে দুনুঘরর শান-শওগতও তত বারে।
উকিল-আদ্দদ্দিন বিয়াইল্যা ঘর-ঘওলা এদ্দে পারাইল্যা মুরব্বি অঁলরে লই জঈদার পারা যায় শফিয়ালম। দুই-চাইজ্জন ফোয়াইরগ্যা লই বদিয়ালমঅ তারার পিছে পিছে যায়। নাস্তা পানি হেইতে হেইতে ফোয়াইরগ্যা অক্কলে বদিয়ালমর অওরঅ গোষ্ঠীর নাম গরে।
মগরিবর নোয়াজর পর জঈদার পারা মছইদদ আদ্দ পরাইবার হতা। বেয়া¹ুন পান-তৌ হেইতে হেইতে নানান গপ-সপ মারে।
এ্যানসত অঠাৎ গরি অই-চঈ শুরু অই যায়। বদিয়ালমল্লই পরিচয় অইত আঁই ছেনুয়ারার ফুওতু ভেঈ আবু কালাম হয়- অ আদ্দুলাভেঈ তো মার্ঁ বদিয়ালম।
শব্দ ইবা হানত এ্যাইয়নর ফোয়ারে ফোয়ারে বদিয়ালমর হান দুনোয়ান জলি ওড়ে। কিন্তু বদিয়ালমর চাঁতো ভেঈ আদ্দু সবুরত্তুন হতা ঈয়ান ওনি মত্তর গোস্বা ওড়ি যাগই। ঈতে গোস্বায় গরম অই যাগই।
অঁনে ঈয়ান কি হইলানদে তালতো?
আদ্দু সবুরর হতা ওনি আবু কালামও আবারঅ মশকারি গরে- নঅয় আদ্দুলাভেঈ তো ...
হতা হারি লঈ আদ্দু সবুর গলারে ডঅর গরি হয়- তোআরা বঁর ছোড় মাইনস্যর জাতেনা।
কি হইলান দে তালতো... আবু কালামে অঙরহার হাত বইট্টে বইট্টে পোছার গরে...
দুনু জনর হজ্জিয়া দেঈ বেয়া¹ুন বেকুবন্নাই চাই থাকে। আবু কালামর হতা ওনি মনে মনে গোস্বায় ফুলিলেঅ চাঁতো ভেঈঅরে ঈশারা গরে বদিয়ালম। কিন্তু ইয়ার আগে দুনুজনর মধ্যে আঁতাআঁতি লাগি যাগই। তারার আঁতাআঁতি দেঈ বউঅর বঁরো গোসটি ছোরাইতে আইয়ে... এ্যাতক্কনে এ দুইজনর তরহ-বিতরহত আঁরঅ হয়েজ্জন বাজি যাগই। দুনু পারার সদ্দার অক্কলেঅ পইল্যা হজ্জিয়া বন্ধ গইত্য ঈতারা দুনুজনরে গাইল-মন্দ গইল্যেঅ শেষদ্দি ঈতারাঅ হজ্জিয়াত বাজাই ফেলায়।
হতক্কন চুম্মারি থাই বদিয়ালম বইড়াত্তুন ওড়ি শফিয়ালমঅরে ডাম্মারে- অদ্দা চলঅ যাইগই। ঈতারঅ মেইয়া বিয়া গইত্তাম নয়। এনডইল্যা বেঈজ্জত গরিবঅদে হঈত্তেইল্যে ঈতারত নও আইসত্যাম।
গোস্বায় বদিয়ালমর চৌগত্তুন টট্টপাই পানির ফোড়া ঝরি পরে।
http://www.somewhereinblog.net/blog/dolupotra/29167538

Wednesday, November 16, 2011

চট্টগ্রামী ভাষা: একটি তাত্ত্বিক আলোচনা

চট্টগ্রামী ভাষা
কাফি কামাল
চট্টগ্রামী- আমার মাতৃভাষার নাম। ভূ-বৈচিত্র্য, নৃ-বৈচিত্র্য আর ভাষা বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে উদ্ভির্ণ। বহু জাতির সংশ্লেষ আর বহু ভাষার সংমিশ্রণে সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষার বহুধা প্রভাবের নাগপাশে থেকেও স্বতন্ত্র। রাষ্ট্রকাঠামোহীনতার যন্ত্রনা, শাসনকেন্দ্রের অবহেলার প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে পূর্ণযৌবনা নদীর মত বহমান। তথাপি, কৌতুহলী অন্বেষা ও সাহসী পদক্ষেপের অভাবে স্বীকৃতিহীন। একটি স্বতন্ত্র ভাষার প্রায় সকল বৈশিষ্ঠ্য বিদ্যমান থাকার পরও উপ বা আঞ্চলিক ভাষার তকমায় বাংলার কারাগারে বন্দী। কবে কাটবে চট্টগ্রামী ভাষাভাষীর ঘোর, মুক্তি পাবে আমার মাতৃভাষা?
চট্টগ্রামীভাষাভাষীদের এখন ঘোর কাটিয়ে জেগে উঠার সময়। কারণ চট্টগ্রামী যেমন ভূইফোঁড় ভাষা নয়। এ ভাষার শেকড় অনুসন্ধানের প্রচেষ্টাও আকস্মিক নয়। যখন বাংলা ভাষাতত্ত্ব চর্চারই ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়নি তখনই গ্রীয়ার্সন, লক্ষন মজুমদার, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, ড. মুহম্মদ এনামুল হক, আবদুর রশিদ ছিদ্দিকীরা চট্টগ্রামী নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবে রূপ পায়নি। এ রূপ না পাওয়ার কারণ ছিল বহুবিধ এবং প্রাসঙ্গিক। সে প্রসঙ্গ পাল্টে, কারণের শৃঙ্খল ভেঙে সামনে যাওয়ার দিন এখন। মনে হতে পারে- এ কাজ তো ভাষাবিদদের। প্রশ্ন আসতে পারে- কেন জেগে ওঠতে হবে? উত্তরে ড. মনিরুজ্জামানের একটি বক্তব্য ধার করে বলি- ‘এ কথা সত্য, ভাষার তথ্য যথাযথ উপস্থিত করার দায়িত্ব প্রধানত সেই ভাষাভাষির; পরে বিশেষজ্ঞের।’ তাই চট্টগ্রামভাষাভাষীরা কৌতুহলী হলে, দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠলে একদিন ভাষাতাত্ত্বিকরা নেমে পড়বেন অনুসন্ধানে, মেতে উঠবেন যুক্তিতর্কের বিচারে।
আসুন, একবার আমাদের সে সন্ধান ঐতিহ্যের স্মরণ করা যাক। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ১৯১৯ সালে প্রকাশিত তার ‘ইসলামাবাদ’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, ‘লিখিত ভাষার সহিত উহার (চট্টগ্রামের কথ্যভাষা) বৈষম্য খুবই বেশী- এত বেশী যে চেষ্টা করিলে আসামীদের (অসমীয়া) মত আমরাও অনায়াসে একটা পৃথক ভাষার সৃষ্টি করিতে পারিতাম। কিংবা বহু বিষয়ে সাদৃশ্য থাকিলেও চট্টগ্রামের ভাষা ঠিক পূর্ববঙ্গের ভাষা নহে। তবে নোয়াখালী ও ত্রিপুরার ভাষার সহিত ইহার কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। ...এটি একটি পৃথক ভাষার সকল বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে আছে; একটি উপভাষা হয়েও বহিঃপৃথিবীর সাথে এর সংস্রব ও সংযোগ এর ধ্বনি ও ব্যাকরণের বহু এলাকাকে উন্নীত ও প্রসারিত করেছে এবং ইহার মত সমৃদ্ধশালিনী ও সর্বাঙ্গসম্পূর্ণা ভাষা বাঙ্গালার অন্যত্র খুব কমই মিলিবে। ...চট্টগ্রামের ভাষা ঠিক ‘পূর্ববঙ্গে’র ভাষা নয়। অর্থাৎ ধ্বনি প্রকরণে ও ব্যাকরণে চট্টগ্রামের উপভাষা পূর্ববঙ্গীয় উপভাষা সমূহের সমশ্রেণীর ভাষা নয়।’ এ দাবির পক্ষে সাহিত্য বিশারদ ব্রিটিশ পণ্ডিত গ্রীয়ার্সনকে স্মরণ করে বলেছেন, ‘বহু ভাষাবিৎপণ্ডিত মি. গ্রীয়ার্সনও যে ভাষার নিখুঁত উচ্চারণ লিপিবদ্ধ করিতে পারেন নাই, সে ভাষার নিখুঁত উচ্চারণ লিখিয়া প্রকাশ করা যে অত্যন্ত দুরূহ বিবেচিত হইবে, তাহাতে আর বৈচিত্র্য কিছুই নাই।’ তাহলে গ্রীয়ার্সন কি বলেছিলেন? গ্রীয়ার্সন তার ১৯০৩ সালে প্রকাশিত ‘লিঙ্গুয়েস্টিক সার্ভে অব ইণ্ডিয়া’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘বাংলা থেকে অসমীয়া ভাষার দূরত্ব যতখানি, চট্টগ্রামী বুলির স্বাতন্ত্র্য তদপেক্ষা দূরত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম।’ গ্রীয়ার্সন তার আলোচনায় চট্টগ্রামী উপভাষাকে ‘দক্ষিণ-পূর্ববাংলা’ উপভাষার অন্তর্গত করে ‘চাটগাইয়া’ নামকরণটিকে সম্প্রসারিত করতে চেয়েছিলেন।
শুধু কি গ্রীয়ার্সন? বাংলাভাষী বহু পণ্ডিত চট্টগ্রামীর স্বাতন্ত্র্য স্বীকার, মৌন স্বীকার করেছেন। গদ্যকার প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষা আহত হয়েছে সিলেটে, আর নিহত হয়েছে চট্টগ্রামে।’ তার এ বক্তব্যই প্রমান করে চট্টগ্রামী ভাষা বাংলা নয়। কারণ নিহত হওয়া মানে অন্যপারে চলে যাওয়া। বাংলার কাছাকাছি হলেও বাস্তবে চট্টগ্রামী অন্যপারেরই ভাষা। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে হলেও তো আসলে লুপ্ত আরাকানের উত্তর-পশ্চিমাংশের ভাষা। বোদ্ধা এবং সহৃদয় বাংলাভাষী মাত্রই এ সত্য স্বীকার করবেন। সম্প্রতি জার্মান গবেষক ড. হান ও ফিনল্যাণ্ডের ফোকলোর গবেষক ড. ভেলাইটি চট্টগ্রামের মাইজভাণ্ডারী গান নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ সময় চট্টগ্রামের সাহিত্যিক মহলের বিভিন্ন ঘরোয়া আলাপে তারা বলেছেন, ‘চট্টগ্রামী সম্পূর্ণ আলাদা একটা ভাষা, এটি বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্ত নয়।’ কবি বুদ্ধদেব বসু’র মুখের বোল ফুটেছে পিতার কর্মত্রে নোয়াখালীতে। সেখানেই তাঁর বেড়ে উঠা। অবাক বিষ্ময়ে তিনি নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভাষাকে অনুধাবন করেছেন। এ অঞ্চলের ভাষার মাধুর্য নিয়ে তিনি তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন- ‘আর কোথাও শুনিনি ঐ ডাক, ঐ ভাষা, ঐ উচ্চারণের ভঙ্গি। বাংলার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের ভাষা বৈশিষ্ট্য বিস্ময়কর। চাটগাঁর যেটা খাঁটি ভাষা, তাকে তো বাংলাই বলা যায় না।’
কিংবদন্তী আছে, একবার কলকাতার এক ভদ্রলোক চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রামী ভাষায় দুইজন স্থানীয় মানুষের আলাপ শুনে এর অর্থ জেনে নেন। পরে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাঃ এযে দেখচি চমৎকার ভাষা! ইংরেজিতে শর্ট-হ্যাণ্ড (ঝযড়ৎঃ ঐধহফ) আছে। কিন্তু শর্ট-মাউথ (ংযড়ৎঃ সড়ঁঃয) নেই। চাঁটগেয়ে বাঙ্গালিরা এ ব্যাপারে ইংরেজদের ওপরও টেক্কা দিয়েছেন দেখছি। তারা শর্ট-মাউথ বের করে ফেলেছে দেখছি।’ আরেকটি কিংবদন্তী হচ্ছে- ‘সিলেটি অসমিয়ার খালাতো ভাই, আর চট্টগ্রামী আরাকানী আপন ভাই।’ এ কিংবদন্তীর পেছনে যে যুক্তি আছে তা হচ্ছে- বাংলাদেশের অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাগুলো মোটামুটি বাংলার কাছাকাছি। কেবল চট্টগ্রামী আর সিলেটি ছাড়া। বাংলার সঙ্গে চট্টগ্রামীর ব্যবধান আরেকটি জায়গায় সুস্পষ্ট। বাংলা হচ্ছে- বর্ণনাত্মক ভাষা আর চট্টগ্রামী হচ্ছে ডায়ালেকটিক। শিক্ষিত লোকমাত্রই জানেন, এক সময় বলা হতো- বাংলাভাষার জন্ম সংস্কৃতির বিকৃত রূপ থেকে। দাবি করা হতো- বাংলা সংস্কৃতির দুহিতা। পরে আবিস্কার হলো বাংলার উৎস সংস্কৃত নয়, প্রাকৃতের অপভ্রংশ। এখন চট্টগ্রামীকে বাংলার উপ বা আঞ্চলিকভাষা দাবি করা হলেও একদিন এ দাবি মিথ্যা প্রমান হবে। স্বীকৃতিহীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে আমার মাতৃভাষা চট্টগ্রামী।
চট্টগ্রামী কেন স্বতন্ত্র ভাষা? বাংলাভাষার পূর্বাপর অবস্থার ঐতিহাসিক পর্যালোচনা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ভাষার নানা আঞ্চলিক বিকাশ বা বৈচিত্র্য ধারনের মধ্যে ইতিহাসের সংরক্ষিত সূত্রগুলি লক্ষ্য করে ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভৌগোলিক সীমা বিভাজন দ্বারা বাংলার একটি শ্রেণীকরণ করেন। তার শ্রেণীকরণের (রাঢ়ী, বরেন্দ্রী, কামরূপী, বঙ্গালী) মধ্যে চট্টগ্রামী (চট্টগ্রাম অঞ্চল) নেই। সুকুমার সেনও এ শ্রেণীভাগ মেনেছেন। দুই বিখ্যাত ভাষাবিদদের বিবেচনা থেকে পরিস্কার হয়; চট্টগ্রামী কোনভাবেই বাংলার উপ বা আঞ্চলিক ভাষা নয়। ভাষাবিদ ড. মনিরুজ্জামান তার ‘উপভাষা চর্চার ভূমিকা’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘চট্টগ্রামীর অক্ষর-ঝোঁক, হ-উহ্যতা এবং আন্তঃস্বরীয় ব্যঞ্জন ধ্বনির লোপ বা দ্বিত্বতা ও তৎসহ শব্দগঠনে সংকোচন সংক্ষেপন প্রবণতাই বাংলাদেশের অপরাপর উপভাষা থেকে একে পৃথক করেছে। ...বাংলা ভাষার উপভাষাগুলির মধ্যে সিলেট, নোয়াখালী ও চাঁটগার উপভাষা কিছু স্বাতন্ত্রের অধিকারী। সিলেটি ভাষা ‘টানের’ দিক থেকে, নোয়াখালি দ্রুততার দিক থেকে ও চট্টগ্রামের ভাষা স্বরধ্বনি বহুলতা ও শব্দ সংকোচন বা সংক্ষেপিকণের দিক থেকে আবার ভিন্ন।’ সাহিত্যবিশারদের মতে, চট্টগ্রামী একটি মিশ্রভাষা। তবে গ্রীয়ার্সন, মুনীর চৌধুরী এবং আরও অনেকে এই দূরপ্রান্তীয় অঞ্চলের ভাষাকে ‘দক্ষিণ-পূর্ব উপভাষা’ অঞ্চলের বিভাষা রূপেই দেখেছেন। তথাপি ক্বচিৎ আবার সাধারণ পরিচয়ের জন্য অনেকে ‘পূর্ববঙ্গীয় উপভাষার’ সাথেই দূরবর্তী সম্পর্কে সম্পর্কিত করে দেখেছেন। মনসুর মুসা এ দূরবর্তী সর্ম্পককে সমর্থন করে বলেছেন- ‘বাংলাভাষার সবচেয়ে দূরবর্তী উপভাষাটিই চট্টগ্রামী।’ আর এ দূরবর্তী সম্পর্কের তৈরির পেছনে কাজ করছে রাষ্ট্র কাঠামো। যদি বৃহত্তর চট্টগ্রাম বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে না হতো তবে ভাষাতাত্ত্বিকরা নিশ্চয় এ দূরবর্তী সম্পর্কটি পাততে যেতেন না। এ ব্যাপারে ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রামীকে পৃথক উপশ্রেণীভুক্ত করার যুক্তি এই উপভাষার মধ্যেই নিহিত: ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যে পূর্ববঙ্গীয় উপভাষা থেকে তার পার্থক্যটি স্পষ্ট। চট্টগ্রামীর দূর্ভাগ্যের বিষয়টি এখানে যে, বাংলাভাষী পণ্ডিতরা যেভাবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার সাধনা করেছে তা চট্টগ্রামীভাষীরা করেনি। আর বাংলা ও চট্টগ্রামীভাষী পণ্ডিতদের যথাযথ আগ্রহ এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কোনটিই পায়নি চট্টগ্রামী।
কিভাবে স্বতন্ত্র হয়েছে? প্রশ্ন আসতেই পারে। তাহলে ব্যাকরণগত কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা যাক। বাংলা ভাষায় বিরল কিন্তু চট্টগ্রামীতে প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর কিছু উদাহারণ হচ্ছে- উচ্চারণ বৈচিত্র্য, শব্দার্থ বৈচিত্র্য, শব্দায়ব সংপে পদ্ধতি ও শব্দ যোজন রীতি। উচ্চারণ বৈচিত্র; যেমন: সপ্তমি বিভক্তিযুক্ত ও অসমাপিকা ক্রিয়ার ‘এ-কার’ লোপ পেয়ে শেষের বর্ণটি হসন্তযুক্ত হয়। শব্দের শুরুতে শ, ষ, স থাকলে অনেক সময় ‘হ’ বর্ণে রূপান্তরিত এবং একই শব্দ উচ্চারণের দীর্ঘ-হ্রস্বের কারণে অর্থ পাল্টে যায়। শব্দার্থ বৈচিত্র; বাংলা মান ভাষায় ব্যবহৃত একই শব্দ চট্টগ্রামীতে এসে ভিন্ন অর্থ তৈরি, কোন বিশিষ্ট দীর্ঘভাবকে সুন্দরভাবে এক বা অল্পকথায় প্রকাশ করার অপরিসীম মতা এবং প্রতিশব্দের আধিক্য ইত্যাদি। শব্দায়ব সংক্ষেপ; ঐতিহাসিক নানা কারণে চট্টগ্রামবাসীর উচ্চারণ-ত্রস্ততায় অর্জিত গুনে বাংলা ভাষার দীর্ঘ বাংলা শব্দের সংপ্তি অবয়ব বা শব্দায়ব সংপে পদ্ধতি। চট্টগ্রামীতে শব্দের মধ্যস্থিত ‘ব’ লোপ পায় (রবিবার-রইবার) ও ‘ম’ আনুনাসিক চন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং শব্দান্তের বা মধ্যে ‘ক’ গ হয়। শব্দযোজন রীতি; বাংলাদেশের অন্যান্য আঞ্চলিক বা উপভাষার মত পরম্মুখ না হয়ে চট্টগ্রামীতে অনেক শব্দ মিলে এক শব্দ হয়ে যায়। এছাড়া উর্দু ও হিন্দির মত ঋণাত্বক পদ ক্রিয়ার পরে না বসে আগে বসাটিও একটি স্বতন্ত্র ভাষার লক্ষন। ভাষাবিদদের মতে, আইরিশ ইংরেজি ও মূল দ্বীপের ইংরেজির ব্যাকরনী ভেদ যেমন দু®প্রাপ্য নয়, তেমনি বাংলা উপভাষাতেও চট্টগ্রামী বাংলায় বাক্যগঠন রীতি অপর প্রান্তীয় ভাষা রংপুরী বাক্যগঠন রীতির সাথে মিলে (আঁই ন যাই/না জাঁও মুইদি)। এই পদক্রম রীতির ঐতিহাসিক সংরক্ষণ অন্য উপভাষায় দূর্লভ। উচ্চারণ সহজীকরণ তথা সংক্ষেপণ এখানকার লোকদের একটা স্বভাব। কিছু কিছু পণ্ডিত এটাকে উচ্চারণের কোমলীকরণ বলেও মত দিয়েছেন। এছাড়া পদমধ্যবর্তী ব্যঞ্জনবর্ণ প্রায়ই লোপ বা বিকৃত (কোমল) হয়। পূর্ণবিকৃতিও কম নয়। ধ্বনিতত্ত্বে ঘোষ মহাপ্রাণ বর্ণ ‘ঘ’, ‘ধ’, ‘ভ’ প্রভৃতি এবং আদি ‘হ’ রতি আছে। রূপতত্ত্ব একবচনে ‘র’, অধিকরণের এক বচনে ‘ত’ বিভক্তি (বাড়িতে-বাড়িত্)। নিষেধার্থক অব্যয় ‘ন’ ক্রিয়ার আগে (গেল না- ন গেল) বসে। চট্টগ্রামীতে ক ও খ, প ও দ উচ্চারণে একটু বৈচিত্র আছে। ক খ-এর মতো এবং প ফ-এর মতো উচ্চারিত হয় কিন্তু তেমন জোর পড়ে না। অনেক সময় ‘র’ কে ‘ল’ উচ্চারণ করা হয়।
ভাষাতাত্ত্বিক দিক থেকে স্বাতন্ত্র্যের ব্যাপারে ড. মনিরুজ্জামান তার ‘উপভাষা চর্চার ভূমিকা’ গ্রন্থে বলেন, ‘ইংরেজিতে ও ফড় হড়ঃ মড়; এর ঝখঅঘএ- ও হড়ঃ মড়; চাটগোঁয়ে- ‘আঁই ন যাই’। রূপতত্ত্বের দিক থেকে বাক্যগঠনের এই ভঙ্গিটি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রদেশের উপভাষায় ‘আমি’ বড় জোর ‘আমি-এ’ অর্থাৎ অন্তঃস্বরের ভঙ্গি একটা থাকে, আবার থাকেও না। ...কিন্তু দ্রুত বলার সময় নাকের অতি সুপ্ত একটা ব্যঞ্জনা স্পর্শলাভ করে এই ধ্বনিগুলি চাপা হয়ে বেরিয়ে আসে। অভিশ্রুতি ‘যাবো’, অপিনিহিতি- যাইবো, বিকল্পে- যাইমু; চট্টগ্রামে যাইয়ুম। - এই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব এ ভাষায় অধিক। একটানা টেনে বলা এখানকার নিয়ম। ফলে প্রথম ধ্বনিগুচ্ছ ও শেষ ধ্বনিগুচ্ছ ধরেই প্রায় এদের বাক্য সম্পূর্ণ হয়। মধ্যের সকল ধ্বনি বা শব্দ উচ্চারিতও হয় না। ...এই উপভাষায় অন্তঃস্থ বর্ণগুলি যত স্পষ্ট উচ্চারিত হয়, অন্য উপভাষায় তা তত হয় না। এখানে এষরফরহম ংড়ঁহফ ও ঝবসর াড়বিষ- এর বিচিত্র ব্যভহারও লক্ষ্যনীয়। স্পর্শ বর্ণগুলিকে- (ক, খ, গ, ঘ; চ, ছ, জ, ঝ; ট, ঠ, ড, ঢ; ত, থ, দ, ধ; প, ফ, ব, ভ) বেমালুম স্বরধ্বনিতে পরিণত করে। মহারাষ্ট্রী প্রাকৃতের মত (যেমন প্রাকৃতের- পাউঅইঃ); স্বরধ্বনি প্রবণতাই এর কারণ। ‘বইয়ো’ বা ‘বইঅ’ (ব’স) ধ্বনিটির উচ্চারণ কালে এই তিনটি কথারই প্রমাণ পাওয়া যায়। আনুনাসিক ব্যঞ্জনাও এ ভাষার একটা নিয়মিত ফলশ্রুতি। ‘মামু’ শব্দের সবগুলি স্বর আবার কেব ‘ম’ এই ডাকে এসে দাঁড়ায়, তখন বেকল তাতে আশ্চর্যই হতে হয়।’
বাংলাভাষীরা প্রায়শই বর্ণমালার অভাবকে দিয়েই ঘায়েল করতে চায় চট্টগ্রামীকে। ক্ষয়িঞ্চু জমিদারের মত চট্টগ্রামীকে দাবি করেন বাংলার আঞ্চলিকভাষা। কিন্তু চট্টগ্রামী ভাষার অবোধ্যতা ও উচ্চারণ নিয়ে পরিহাস করার হীন মানসিকতা লুকোতে পারেন না। কি অদ্ভুত স্ববিরোধীতা! আসলে ভাষার বিকাশে অনেক সময় একটি তৃতীয়ভাষা দূর থেকেও কাছের এবং একটি আপন ভাষা কাছে থেকেও পর হয়ে থাকতে পারে। যেমনটি হয়েছে- চট্টগ্রামীর ক্ষেত্রে। ভাষাগোষ্ঠীগত সম্পর্কের পরও প্রতিটির স্বাতন্ত্র্যের পক্ষে ভাষাবিদরা নানা যুক্তি দেখিয়েছেন। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, পৃথিবীর কোন ভাষাই স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়। সব ভাষাতেই কিছু না কিছু বিদেশী বা ভিন্ন ভাষার শব্দ থাকে। ভাষা সচেতন বাঙালি মাত্রই জানেন, হাজং উপজাতির ভাষার সঙ্গে বাংলা ও অহমিয়া ভাষার মিল আছে। অন্যদের মধ্যে- খাসিয়া ভাষা বৃহত্তর অষ্ট্রিক পরিবারের মন-মের শাখার এবং খ্যাং ভাষা ভোট-বর্মী শাখার কুকি-চীন দলের অন্তর্ভুক্ত। আবার ভাষা, সংস্কৃতি, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদি জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ েেত্র লুসেইদের সঙ্গে পাংখোয়াদের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। লুসেই ও ম্রো ভাষা তিবেতো-বর্মণদল এবং চাক ভাষা তিবেতো-বর্মণ দলের সাক বা লুই দলভুক্ত। রাখাইন ও মারমা ভাষা বর্মীদল, পাংখুয়া ভাষা দণি-চীন এবং বোম ও খুমি ভাষা কুকি-চীন এবং ত্রিপুরাদের কক্বরক্ ভাষা বোডো দলের অন্তর্ভুক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রামের ুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো মধ্যে খিয়াং জনগোষ্ঠীর ভাষার কোন লিখিত রূপ নেই। মুরং এবং খুমিদেরও ছিল না। গত শতাব্দীর শেষদিকে এসে মেনলে ম্রো নামের এক তরুণ মুরং বর্ণমালা তৈরি করেন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী খুমিদের বর্ণমালা তৈরি করা হয়েছে রোমান বর্ণে। আবার বম, লুসাই ও পাংখোয়াদের বর্ণমালা মূলত একই। এ ধরনের দ্বৈত ভাষা রূপ রয়েছে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের চাকমা প্রাইমার, মারমা ও চাকদের চা আক্খ্রায়। মণিপুরীদের ভাষা বাংলা হরফেও লেখা হয়। কিন্তু এসব ভাষাকে স্বতন্ত্র ভাষা বলতে কারও আপত্তি দেখা যায় না। ভারতে ২ হাজারেরও বেশী ভাষা আছে। কেরালা, মালায়ালম ও তেলেগু ভাষা শুনলে মনে হয় কৌটার মধ্যে নুড়ি পাথর রেখে ঝাঁকানো হচ্ছে। কিন্তু সেখানে কি ভারতীয়রা সেগুলোকে হিন্দী বলে দাবি করে? হিন্দী এবং উর্দু প্রায় কাছাকাছি একটি ভাষা। সমঝদার ছাড়া এ ভাষা আলাদা করা সহজ নয়। কিন্তু এরা তো পরস্পর পরস্পরকে নিজের বলে দাবি করে না। ধরলাম বাংলা থেকেই চট্টগ্রামীর জন্ম। তাতে কি? উর্দু তো লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা। বাংলাও তো অন্য ভাষা থেকেই এসেছে। বাংলা যদি প্রাকৃতভাষার অপভ্রংশ থেকে জন্ম নিয়ে স্বতন্ত্র ভাষা হতে পারে তবে বহুভাষার সংমিশ্রণ থেকে উৎপন্ন চট্টগ্রামী কেন স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা পাবে না?
ভাষা সচেতন বাঙালি মাত্রই জানেন, বাংলা এবং অসমিয়া বর্ণমালায় অনেক মিল আছে। দুইভাষায় শব্দ, এমনকি অনেকক্ষেত্রে পুরো বাক্যেরও মিল রয়েছে। আবার বাংলাভাষার সাথে চাকমা ভাষার পার্থক্য কোথাও অসমীয়ার মত, কোথাও চট্টগ্রামীর মত। চট্টগ্রামী ও চাকমা ভাষায় আন্তঃস্বরীয় অঘোষ ধ্বনি লুপ্ত হয়। চাকমাদের মধ্যে প্রচলিত কথ্য ভাষার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে ষ্পষ্টত: প্রমাণিত হয়, তা বাংলা চট্টগ্রামী ভাষারই অপভ্রংশ। চট্টগ্রামীর অপভ্রংশের মতো উচ্চারণ রীতি ব্যবহার করলেও চাকমা ভাষার বর্ণমালা বর্মী আদলে তৈরি। ব্রিটিশ আমলে কর্মরত চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার জিন বিসম ১৮৭৯ সালের ৫ই অক্টোবর রাজস্ব বোর্ডের কাছে লেখা এক পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘চাকমাগণ অর্ধ বাঙ্গালী। বস্তুত ইহাদের পোশাক পরিচ্ছদ এবং ইহাদের ভাষাও বাংলা ভাষার বিকৃত রূপ মাত্র। এতদ্ভিন্ন চাকমাদের উপাধি ভিন্ন নামগুলোও এমন বাঙালী ভাবাপন্ন যে, তাহাদিগকে বাঙালী হইতে পৃথক করা একরূপ অসম্ভব।’ আসলে জিন বিসম এখানে বাঙালি বলতে চট্টগ্রামীদেরই বুঝিয়েছেন। কথাসাহিত্যিক বিপ্রদাশ বড়–য়া তার ‘নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও বাংলা’ প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘চাকমাদের ভাষা হিন্দ-আর্য শাখার অন্তর্ভূক্ত। তাদের ভাষা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার নিকটবর্তী। তাদের হরফের সঙ্গে কম্বোডিয়ার মনমের হরফ এবং বর্মী হরফের সাদৃশ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন চাকমারা আসামে বসবাসের সময় শানদের কাছ থেকে এই হরফ পেয়ে থাকবেন। চাকমা সাহিত্য উন্নত বাংলা হরফেও এই সাহিত্য রচিত হয়।’ ভাষাতাত্ত্বিকরা বলেন, চাকমা আদপে একটি ভোট-বর্মীদলের ভাষা হয়েও ইন্দো-ইউরোপিয়দলের ভাষায় অপসারিত হয়েছে। এতে আন্দাজ করা যায়, চাকমাদের আগেই চট্টগ্রামী সে পথে হেঁটেছে। যার কারণে আজকের চট্টগ্রামীকে বাংলার আঞ্চলিক বা উপভাষা বলার বহু যুক্তি সামনে এসে দাঁড়ায়। চট্টগ্রামীতে ক্ষেমারজাত শব্দ- গম, লাঙ এর পাশাপাশি দ্রাবিড় শব্দ পোয়া মিলে নতুন অর্থ তৈরি (গম পোয়া- ভাল ছেলে) করেছে। উপরের দুইটি বক্তব্যে ও যুক্তিতে স্পষ্ট বোঝা যায়, চট্টগ্রামী ইন্দো-ইউরোপিয় এবং মঙ্গোলীয় দুই মহাভাষা গোষ্ঠীর এক সেতুবন্ধন। কথা হচ্ছে- ভাষাতাত্ত্বিক এত মিল-মহব্বত ও যুক্তির পরও অসমিয়া এবং চাকমা আলাদা ভাষার স্বীকৃতি পেলে চট্টগ্রামী কেন অবহেলার পাত্র হবে। কি দোষ চট্টগ্রামীর! তাই স্বভাবতই বাংলাভাষীদের প্রতি চট্টগ্রামীভাষাভাষীর প্রশ্ন; বাংলা-অসমিয়ার যত মিল তার চেয়ে বেশী অমিল থাকার পরও কেন চট্টগ্রামী স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা পাবে না?
বাংলাভাষীরা অনেকেই বলেন, চট্টগ্রামীভাষার বেশীর ভাগ শব্দ সংস্কৃত ও বাংলা। এগুলো বাদ দিলে কি ওই ভাষার কিছু থাকবে। প্রথমেই শব্দ মিশেলের কারণটি ব্যাখ্যা করা যাক। ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে এক সময় প্রচুর বাংলা শব্দ আতœস্থ করেছে চট্টগ্রামী। এখন চট্টগ্রামের জনগন সারাদেশে নানা কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত। ফলে তাদের মাধ্যমে নানা শব্দ ঢুকছে চট্টগ্রামীতে। তবে সংস্কৃত ও বাংলাশব্দগুলো তাড়িয়ে দিলে চট্টগ্রামী থাকবে না এমন ভয়ে আতংকিত হওয়ার কোন কারণ দেখি না। বাংলা শব্দ ভান্ডারকে বাদ দিলে চট্টগ্রামীর অঙ্গহানী হবে সত্য বিলুপ্ত হবার নূন্যতম সম্ভাবনাও দেখি না। ভাষা গবেষকরা মনে করেন, যে কোন ভাষার সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে সে ভাষার মৃত্যু অনিবার্য। সেদিক থেকে চট্টগ্রামী আপতদৃষ্টিতে বিপদাপন্ন নয়। যা একটি শক্তিশালী স্বতন্ত্র ভাষার বৈশিষ্ট্য বটে। এখনও প্রায় দুই কোটি মানুষ সার্বক্ষনিক এ ভাষা চর্চা করে। উল্টো বলা যায়, বাংলা ভাষী এখনকার ডি-জুস প্রজন্মের অনেকেই পরে, করে, ধরে, ঘরে, শব্দগুলোকে উচ্চারণ করছেন পড়ে, কড়ে, ধড়ে, ঘড়ে ইত্যাদি। এতে বাংলা দ্রুত বিপদাপন্ন হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রামী সে বিপদ ইতিমধ্যে কাটিয়ে ওঠেছে।
চট্টগ্রামী একটি আন্তঃপ্রতিরোধকভাষাও বটে। কারণ নিজস্ব প্রতিরক্ষার একটি গুন রয়েছে এ ভাষার। একজন বাংলাভাষী সহজে চট্টগ্রামী শুনতে, বুঝতে ও আতœস্থ করতে পারে না। প্রথমে তাকে স্পষ্ট শুনতে বেশ কয়েকবছর ব্যয় করতে হয়। তারপর বুঝতে লাগে এবং বলতে লাগে আরও কয়েকবছর। তাও বিশুদ্ধ চট্টগ্রামী উচ্চারণে সম্ভব হয় না। ফলে বর্হিভাষীকে সহজে সনাক্ত করতে যায়। এ বৈশিষ্ট্যের কথা স্বীকার করে ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘চট্টগ্রামী ভাষায় ঊঁঢ়যড়হরপ পড়সনরহধঃরড়হ, উড়ঁনষরহম ংড়ঁহফ ওহঃৎঁংরাব ংড়ঁহফ (প্রবেশি দ্রুতধ্বনি) বড় মোহকারী। ...স্থানের নামে, সময়ের উল্লেখে, প্রিয়বস্তুর নির্দেশে এমনকি রেগে গেলে সাধারণ কথাতেও এই ‘বিলোপ-পন্থা’ দ্রুত কাজ করে। ফলে বাগধারায় ‘ধ্বনি’ বিচিত্র রূপে ক্রিয়া করে কিন্তু শেষ ‘ধ্বনিগুন’ ক্রমে ভাবানুসঙ্গতায় নির্দিষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ শব্দের ধ্বনি বিশেষ ধ্বনিগুনের অধিকারী- সিলেটির মত যে কোন বাক্যের প্রথম ও শেষ শব্দের টান রাখার নিয়ম এখানে অচল, কিংবা নোয়াখালির মত কতকগুলি অব্যয় ধ্বনি সংযোগও এখানে বৃথা। কৃতঋণ শব্দের মত কিছু প্রাচীন শব্দ (এমনকি পোশাকী শব্দ) এ ভাষায় বহুল ব্যবহৃত, কিন্তু বাগধারার বিপুল স্রোতে তার স্থান এ ভাষার খেয়াল মত হয়ে থাকে। বহু সংস্কৃত ও হিন্দী শব্দ এ ভাষা ঘোট পাকিয়ে ও নানা ছদ্মরূপে এ ভাষায় অবস্থান করছে। অথচ অন্যান্য উপভাষায় মূল শব্দের আদি উচ্চারণ ঠিক থাকে, পরবর্তী উচ্চারণেই শুধু বিকৃতি ঘটে থাকে। চট্টগ্রামের ভাষা সম্ভবত এই কারণেই রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। বাইরে থেকে কোন বাঙালীর পক্ষেই এই ভাষা বোঝা বা আয়ত্ত করা খুব সহজ নয়।’
এছাড়া যেখানে নিজেরই একাধিক উপভাষা ভাষা আছে সেখানে অন্যভাষার উপ বা আঞ্চলিক ভাষা হতে যাবে কেন চট্টগ্রামী। বৃহত্তর অর্থে ভাগ করলে চট্টগ্রামী- রোয়াই ও চাডি¹ানাই দুইভাবে বিভক্ত। সুè বিবেচনায়- কর্ণফুলীর উত্তরতীর থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পূর্ব ঢাল, চন্দ্রনাথের পশ্চিম ঢাল থেকে ফেনীনদী, কর্নফুলীর দণি তীর থেকে মাতামুহুরী নদী এবং মাতামুহুরী থেকে নাফনদী পর্যন্ত চারটি উপভাষা রয়েছে। চট্টগ্রামীতে সাহিত্য সৃষ্টি যে অসম্ভব নয় তার প্রমান এ ভাষার সমৃদ্ধ গীতসম্ভার। এ গীত তো বাংলাভাষাভাষীদের কাছে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ছড়া, কবিতার পাশাপাশি কথাসাহিত্যেও মজবুত হচ্ছে চট্টগ্রামীর অবস্থান। ২০১১’র মহান একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে চট্টগ্রামীভাষার প্রথম গল্পগ্রন্থ- ‘মেইট্টাল’। অবশ্যই অনেকে প্রশ্ন তোলেন- বাংলা বর্ণমালায় কেন চট্টগ্রামী চর্চা? তাদের জ্ঞাতার্থে বলি- বর্তমানে বাংলা বর্ণমালায় মণিপুরী, গারো, হাজং, মারমাসহ বিভিন্ন ভাষাভাষী তরুণ সাহিত্যিকরা সেসব ভাষায় নিয়মিত লিখছেন। আবার অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্যের মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত করছেন। তাহলে চট্টগ্রামী কেন হবে না?
চট্টগ্রামীর সুনিশ্চিত উৎস এখনও অনাবিস্কৃত। সাহিত্যিক আবদুর রশিদ সিদ্দিকী ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত তার ‘চট্টগ্রামী ভাষাতত্ত্ব’ বইয়ে বলেন, ‘উর্দূই চট্টগ্রামী ভাষার বাহন, আরবি ইহার অঙ্গপ্রত্যক্ষ, পার্শি ইহার অঙ্গরাগ এবং বাঙ্গলা ইহার নয়নাঞ্জন।’ আরবি-ফার্সি শিক্ষায় শিক্ষিত আবদুর রশিদ সিদ্দিকী সঙ্গত কারণেই চট্টগ্রামীতে অন্যভাষার হদিস করতে পারেননি। তবে ড. মনিরুজ্জামান বলেছেন, ‘অনুমান করা যায় যে, সিলেট ও নোয়াখালি ভাষা অপেক্ষা চট্টগ্রামের ভাষায় সংঘাত এসেছে প্রচুর। সংঘাত বলতে আমরা একটি নদী-বন্দর কেন্দ্রে ও তার পশ্চাৎ ভূমিতে ভাষা-সংযোগ (খধহমঁধমব পড়হঃধপঃ)ঘটিত পরিবর্তন ও ঋণায়ন তথা অংংরসরষধঃরড়হ, ফরংংরসরষধঃরড়হ, পড়হঃধসরহধঃরড়হ ও ধ্বনি-অভিঘাত প্রাপ্তির অন্যান্য কারণও ঘটনাকেও বুঝবো। ধ্বনি-উচ্চারণগত প্রক্রিয়ায় বাধা না দিয়ে ধ্বনিগঠনে একটা ‘বিলোপ-পন্থা’ও সম্ভবত একটা নু-ঢ়ৎড়ফঁপঃ হিসাবে এখান থেকেই জন্ম লাভ করে থাকবে। ...চট্টগ্রামের ভাষা সাধারণ বাঙালির জন্য একটি দূরবর্তী (অন্ত্য-প্রান্তিক) ভাষা। অন্যান্য উপভাষাভাষী যে কেউ একজন অপরিচিতের সামনে নিজের উপভাষার কথা বলতে সংকোচ বোধ করবেন। চট্টগ্রামের লোকদের সে ‘কমপ্লেক্স’ নেই। উপভাষাকে যে জন্য স্ল্যাং বলা হয়, এরা যেন তা কাটিয়ে উঠেছেন। ভাষা অনেকটা অমৎববসবহঃ-এর মত, ভাষার অঞ্চলগত ভাগ এজন্য প্রায় অপরিহার্য। আঞ্চলিক ভাষারই যদি লেখ্যরূপ গড়ে ওঠে (যেমন জাপান) তবে তার সমৃদ্ধি সকলকে ছাপিয়ে যায়। চট্টগ্রামের ভাষা সবাইকে ছাপিয়ে উঠতে পারে নি, তবে স্বতন্ত্র হতে পেরেছে। ধ্বনি উচ্চারণের নিয়ম, শব্দসৃষ্টি ও কৃতঋণ শব্দের ব্যবহার এবং বাক্য গঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে এদের অনুসরন সাধারণ বাঙালির পক্ষে আজ দুঃসাধ্য। চট্টগ্রামের ভাষা মূল ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন হবার সুবিধা পেয়েছে ঢের অথচ আপন নিয়মকে প্রকাশ করতে গিয়ে হাতের উপাদানগুলিকেই ব্যবহার করেছে বেশি।’ চট্টগ্রামীর স্বাতন্ত্রিক অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘শিষ্ট ভাষার বিকল্পে সৃষ্ট এই ‘নব ভাষা’ ক্রমে ক্রমে তার ভঙ্গিকে পরীক্ষামুলক অবস্থা থেকে অনেকদূরে নিয়ে এসেছে। চীন-কোরিয়া থেকে সরে যেতে জাপানী ভাষা অথবা জার্মান থেকে সরে যেতে ইংরাজি ভাষারও বোধহয় এমনি সুবিধা ছিল। চট্টগ্রামের ভাষার তুলনায় আমাদের অন্যান্য উপভাষায় অর্জিত রূপের প্রতিষ্ঠার সাধনা অল্প।’ সবচেয়ে স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন ভাষাবিদ শিশির ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেছেন, ‘চট্টগ্রামী উপভাষা ও মান বাংলার মধ্যে ব্যাকরণগত এবং শব্দকোষগত মিল থাকলেও উভয় উপভাষার উৎপত্তি চর্যাপদের যুগ বা পরবর্তি কোন যুগে প্রচলিত আলাদা দু’টি উপভাষা থেকে। পুরাকালের সেই দু’টি উপভাষার মধ্যে শব্দকোষগত ও ব্যাকরণগত মিলের কারণেই আজকের মান বাংলা আর চট্টগ্রামীর মিল।’ নৃবিজ্ঞানীরা বলেন, ভাষাগত পার্থক্য জাতি সত্ত্বাতে বৈচিত্র আনে। বক্তব্যটিকে উল্টে দিয়ে যদি বলি, জাতি সত্ত্বার বৈচিত্র ভাষায় পার্থক্য গড়ে। তবে কি ভুল হবে? বাংলার সঙ্গে চট্টগ্রামের জীবনাচরণগত পার্থক্য বা বৈচিত্র যেহেতু পরিস্কার, সেহেতু ভাষাগত পার্থক্যও সুনিশ্চিত। চট্টগ্রামীর স্বাতন্ত্র্যকে অস্বীকার যেমন বাংলাভাষাভাষীদের গোয়ার্তুমী; তেমনি উপ বা আঞ্চলিকতার তকমা নিয়ে নিরবতা পালন হবে চট্টগ্রামীভাষাভাষীর কুপমুণ্ডুকতা। আসুন কূপ থেকে বেরিয়ে, ভাষার সমূদ্রে দেই দীঘল সাঁতার।
লেখক: তরুণ কবি ও সাংবাদিক।
kafi_bd80@yahoo.com

চট্টগ্রামী ভাষায় প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘মেইট্টাল’ এর ভূমিকা: কাফি কামাল

প্রাচীন হরিকেল আর লুপ্ত আরাকানের উত্তর-পশ্চিমাংশই চট্টগ্রাম। আর এ অঞ্চলের বর্ণমালাহীন অথচ স্বতন্ত্র ভাষাটিই চট্টগ্রামী। পুরাকাল থেকেই চট্টগ্রামে আগমন ঘটেছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর। সঙ্গত কারণেই সেসব জাতিগোষ্ঠীর ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে চট্টগ্রামী ভাষায়। আর তাতে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে এ ভাষা। পণ্ডিতদের মতে, চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম প্রবেশ করে পালি ভাষা। তারপর পারস্পরিক স্থানান্তরের ফলে আরাকানি মঘী ভাষা। সুদূর কাল থেকেই বাণিজ্যিক কারণে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আরব্য নাবিকের আনাগোনা ছিল। কারও কারও মতে, এখানে তাদের উল্লেখযোগ্য বসতি গড়ে ওঠা এবং পরে মোগল আমলে ধর্মীয় ও দাপ্তরিক কারণে আরবি-ফারসি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটে। কিছুকাল পর্তুগিজদের অধিকারে থাকায় পর্তুগিজ এবং সর্বশেষ ব্রিটিশ আমলে ঘটে ইংরেজির অনুপ্রবেশ। মাঝপথে বিভিন্ন সময় প্রাকৃত, অহমিয়া সহ মঙ্গোলয়েড নানা প্রান্তিক জাতি-গোষ্ঠীর শব্দও। এভাবে বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে সংযোগের কারণে যুগে যুগে সৃষ্টি হয়েছে বহু অর্বাচিন শব্দও। এছাড়া চট্টগ্রাম কখনও ভারতের অধিকারে না থাকলেও চট্টগ্রামী ভাষায় হিন্দীর প্রভাবও বেশ লণীয়। বৈদিক ভাষার সঙ্গেও রয়েছে চট্টগ্রামীর মিল। তবে চট্টগ্রামী উপভাষা কোনভাবেই মান বাংলার আঞ্চলিক রূপ নয়। শিশির ভট্টাচার্য্যরে মতে, চট্টগ্রামী উপভাষা ও মান বাংলার মধ্যে ব্যাকরণগত এবং শব্দকোষগত মিল থাকলেও উভয় উপভাষার উৎপত্তি চর্যাপদের যুগ বা পরবর্তি কোন যুগে প্রচলিত আলাদা দুটি উপভাষা থেকে। পুরাকালের সেই দু’টি উপভাষার মধ্যে শব্দকোষগত ও ব্যাকরণগত মিলের কারণেই আজকের মান বাংলা আর চট্টগ্রামীর মিল। তবে মনসুর মুসার মতে, বাংলাভাষার সবচেয়ে দূরবর্তী উপভাষাটিই চট্টগ্রামী। পণ্ডিত আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের মতে, চট্টগ্রামী একটি মিশ্রভাষা। এ নিয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. এনামুল হক, ড. আহমদ শরীফ, আবদুল হক চৌধুরী, আবুল ফজল, ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো সহ অনেক ভাষাবিদই পরস্পরবিরোধী অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যা হোক, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মিয়ানমানের উত্তর-পশ্চিমাংশ, আরাকান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের ভাষায় রয়েছে চট্টগ্রামীর বিরাট প্রভাব। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের অভিমত, উচ্চারণ সহজীকরণ তথা সংপেণ এখানকার লোকদের একটা স্বভাব। কিছু কিছু পণ্ডিত এটাকে উচ্চারণের কোমলীকরণ বলেও মত দিয়েছেন। যথা, ক বর্ণটি চট্টগ্রামের মানুষ প্রায়ই কোমল বা স্বল্পপ্রাণ হ-এর মতো করে উচ্চারণ করে। চট্টগ্রামী ভাষায় পদমধ্যবর্তী ‘ম’ আনুনাসিক হয়। যথা- আঁই (আমি), আঁর (আমার), তুঁই (তোমার), কুঁআর (কুমার), ছঁই (শিম)। উল্লেখ্য, এ বইয়ে আনুনাসিকের জন্য চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া পদমধ্যবর্তী ব্যঞ্জনবর্ণ প্রায়ই লোপ বা বিকৃত (আসলে কোমল) হয়। যেমন- মিডা (মিঠা), ডাই (ডাকিয়া), বুগ (বুক), জইদার (জমিদার) ইত্যাদি। পূর্ণবিকৃতিও কম নয়। যেমন- এ্যাত্তে (তখন)। পণ্ডিতরা বলেছেন, অহমিয়া ভাষার সঙ্গে চট্টগ্রামী ভাষার ধ্বনি ও রূপতত্ত্বে কিছু কিছু মিল দেখা যায়। ধ্বনিতত্ত্বে ঘোষ মহাপ্রাণ বর্ণ ‘ঘ’, ‘ধ’, ‘ভ’ প্রভৃতি এবং আদি ‘হ’ রতি আছে। রূপতত্ত্ব একবচনে ‘র’, যেমন- হাতর, ঘরর ইত্যাদি। অধিকরণের এক বচনে ‘ত’ বিভক্তি যথা- বাড়িত্ (বাড়িতে), ঘরত্ (ঘরেতে)। নিষেধার্থক অব্যয় ‘ন’ ক্রিয়ার পূর্বে বসে যথা- ন গেল (গেল না), ন আছিল (ছিল না), ন বুঝি (বুঝি না) ইত্যাদি। চট্টগ্রামী ভাষায় ক ও খ, প ও দ উচ্চারণে একটু বৈচিত্র্য আছে। ক খ-এর মতোই উচ্চারিত হবে কিন্তু তেমন জোর পড়বে না। যেমন ‘ক অত্তে’ প্রকৃত উচ্চারণ ‘হ অত্তে’, ‘ড়’-এর উচ্চারণ ‘র’-এর মতো। অনেক সময় ‘র’ কে ‘ল’ উচ্চারণ করা হয়। আবার পরুয়া (পরশু) এখানে ‘প’ ও ‘ফ’-এর মতো উচ্চারিত হবে অথচ ‘ফ’-এর মতো জোর পড়বে না। ঊর্ধ্বকমা (’) ব্যবহৃত শব্দগুলো পড়ার সময় (’)’র পরের বর্ণটিতে জোর দিতে হবে। উর্ধ্বকমাকে অর্থভেদে অ/আ/ই হিসেবে পড়তে হবে। আবার চট্টগ্রামী ভাষার রয়েছে একাধিক রূপ। বৃহত্তর অর্থে ভাগ করলে চট্টগ্রামী ভাষা চার ভাগে বিভক্ত। ক. চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পূর্ব থেকে কর্ণফুলীর পশ্চিমতীর হয়ে শহরের উত্তর-পূর্বাংশের ভাষা, খ. শহরের দণিাংশ থেকে কর্ণফুলী পেরিয়ে মাথামুহুরীর উত্তরতীরের ভাষা, গ. মাথামুহুরীর দণিতীর থেকে কক্সবাজারের ভাষা ও ঘ. চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পশ্চিমের সমুদ্রতীর ধরে শহরের উত্তর-পশ্চিমাংশের ভাষা। এর মধ্যে (ঘ) অংশটি নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষার বিশাল প্রভাব রয়েছে। ফলে চট্টগ্রামে ভাষাগতভাবে তাদের থার্টি ফাইভ-সিক্সটি ফাইভ বলে মন্তব্য করা হয়। অন্যদিকে (গ) অংশের ভাষায় রয়েছে আরাকানি ভাষার বিশাল প্রভাব। ক ও খ অংশ দুটির ভাষা তুলনামুলক নিজস্ব। তবে এ দুই ভাষার মধ্যেও রয়েছে দৃশ্যমান ফারাক। যেমন- ক. অংশে জ-এর ব্যবহার (কুইজ্জা, দইজ্জা) ও খ. অংশে গ-এর ব্যবহার (কুইরগা, দইরগা) পরিস্কার একটি ভেদরেখা টেনে দিয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের হিন্দু-বৌদ্ধদের ভাষারও কিছুটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মোটা দাগে চট্টগ্রামী ভাষাকে রোয়াই-চাডি¹ানাই দুইভাগেও ভাগ করা হয়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামী ভাষার উচ্চারণ বিশ্লেষণ রীতিমতো কঠিন ব্যাপার। তবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের যে কোন অংশের লোকজন সহজে এবং স্বতস্ফূর্তভাবেই অন্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটাতে পারেন। ‘মেইট্টাল’ চট্টগ্রামীভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ গল্পগ্রন্থ। গল্পগুলো মূলত (খ অংশের) বা দণি চট্টগ্রামী ধারায় লেখা। তবে চট্টগ্রামী ভাষার অন্য ধারার লোকজনও গল্পগুলো বুঝতে পারবেন। চট্টগ্রামী ভাষার লিখিত রূপ না থাকা ও উচ্চারণ জটিলতার কারণে পাঠ কিছু কঠিন হবে। এ ছাড়া কিছু চট্টগ্রামী শব্দ বানানের প্রয়োজনীয় বর্ণও পাওয়া যায়নি বাংলা বর্ণমালায়। যা বিকল্প বানানে লেখা হয়েছে। যেমন- পেউরগা (মাটি কাটার ঝুড়ি), ভোউট্টা (ভোটটি)। সব মিলিয়ে যৌক্তিক কারণেই কিছু বানান ত্র“টি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে পাঠকের সুবিধার্থে প্রতিটি গল্পের শেষে কিছু শব্দার্থ দেয়া হয়েছে। মান বাংলার ক্রমপ্রসারনে লুপ্তমুখী মৌখিক ভাষা চট্টগ্রামীকে কালের করাল গ্রাস থেকে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ এবং বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে এ ভাষার বৈচিত্র্য তুলে ধরার জন্যই আমার এ প্রচেষ্টা। চট্টগ্রামী ভাষাভাষী কবি-সাহিত্যিকদের মাতৃভাষায় সাহিত্য ও ভাষাতত্ত্ব চর্চায় আগ্রহী তুলতেও বৈকি। বইয়ের ‘কুর কুরাইন্না আঁসি’ গল্পটি দৈনিক মানবজমিনের ২০১০ ঈদ সংখ্যায় ও অন্যগল্পগুলো সামহোয়ারইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের তাৎক্ষনিক নানা উৎসাহব্যাঞ্জক মন্তব্য আমাকে উদ্দীপ্ত ও বই প্রকাশ তরান্বিত করেছে।
কাফি কামাল
ফেব্রুয়ারি ২০১১

Test

Hi this is Kafi Kamal